তাপমাত্রার পারদ কমে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। পাহাড়ি হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীত জেঁকে বসেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতায় নাজেহাল জনজীবন। গভীর রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোটার মতো কুয়াশা ঝড়ছে। তাপমাত্রা আবারো কমে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদদের মতে, যেসব এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, সেসব এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসেবে উত্তরের এ প্রান্তিক জেলার ওপর দিয়ে দুই দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ বলেন, শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষ করে এ এলাকায় হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি প্রবেশ করায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে সকালেই সূর্যের মুখ দেখা মিলছে।

নতুন বছরের শুরু থেকেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এই অঞ্চলে। গত দুই দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহের দাপটে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই শ্রেণির মানুষগুলো।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলার প্রকৃতিজুড়ে হালকা কুয়াশা জড়ানো থাকলেও ঝলমলে রোদ নিয়ে উঠে গেছে ভোরের সূর্য। তবে তাপমাত্রার পারদ কমে যাওয়ায় কনকনে শীতে কাঁপছে এ জেলার মানুষ। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরেছে বরফ শিশির। বরফের মতো ঠান্ডা বাতাসে কাবু করে তুলছে এ এলাকার আপামর মানুষদের।

আরো পড়ুন : যেসব জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ

শুক্রবার রাত ৯টার পর থেকেই শহরের হাটবাজারগুলোতে জন কোলাহল কমতে থাকে। বাজারের কোথাও কোথাও কাগজের কাটন, শুকনো কাঠখড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। তবে জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপা কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় পড়ে কাজে বের হতে দেখা গেছে কর্মজীবী মানুষদের। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাসের কারণে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে শীতের তীব্রতায়।

এদিকে শীত বাড়তে থাকায় জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ছুটছেন হাসপাতালে। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেশি। যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকরা চিকিৎসার পাশাপাশি শীতে সুরক্ষিত থাকতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, শীত নিবারণের জন্য পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০ হাজার ৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।

পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০ হাজার ৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে বলে জানান তিনি।