সূর্যের দেখা নেই, শীতে কাঁপছে লালমনিরহাটের মানুষ

রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩২ এএম

কনকনে ঠান্ডার কারণে দরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। ছবি : সংগৃহীত
তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি উত্তরের এই সীমান্তবর্তী জেলায়। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পুরো অঞ্চল। চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। হিমেল হাওয়া আর ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ফলে স্থবিরতা নেমে এসেছে জনজীবনে।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাই দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে প্রতিবছর এ জেলায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা পড়ে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না এ জেলায়। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে এই অঞ্চলের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
এদিকে জেলার সদর হাসপাতাল সহ-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
শুক্রবার লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও পশ্চিমা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুর আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় রবি মৌসুমে রবি শস্যর ঠান্ডাজনতি বালাই নিয়ে বিপাকে পরেছে কৃষক। কনকনে ঠান্ডার কারণে দরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে।
আদিতমারী উপজেলার কৃষক নূর ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশায় আলু ক্ষেতে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ রকম শীত আরো কয়েকদিন চললে আলু লেট ব্লাইটসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া শীত ও কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লালমনিরহাট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে লালমনিরহাটে শীতের দাপট খুব বেশি পরিলক্ষিত না হলেও গত তিন দিনে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। লালমনিরহাট-সহ আশে-পাশের এলাকায় তাপমাত্রা এখন ১০ থেকে ১২ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। তিনদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষণিকের জন্য দেখা গেলেও কোনো কাজে আসেনি শীতার্ত মানুষের।
আরো পড়ুন : সাগরে নিম্নচাপের আভাস, ৪ ডিগ্রিতে নামবে তাপমাত্রা
এদিকে তীব্র ও ঠান্ডা শীতের কারণে নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর কাজের অভাব দেখা দিয়েছে। খেটে-খাওয়া মানুষেরা ঠিকমত নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে না পেরে বেকায়দায় পরেছেন তারা। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতার কমে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো দিনের বেলা হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই।
সকালে সদর উপজেলার বড়বাড়ীতে কথা হয় আটোরিকশা চালক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে ঠান্ডা শীত এখন বেলা ১২টা বাজে এ পর্যন্ত কোনো যাত্রী পেলাম না। রিকশা চালিয়ে টাকা আয় করতে না পারলে পরিবার না খেয়ে থাকবে।
পাটগ্রামের রুবেল মিয়া জানান, দিন দিন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডার মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাস আর কনকনে শীতে জনজীবনে অনেকটা ভোগান্তি বেড়েছে। গরীর অসহায় দিন মজুর প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেরে অনেকটা দিশেহারা। শীত নিবারণের জন্য মোটা গরম কাপড় পরতে হচ্ছে তবুও ঠান্ডা নিবারণ হচ্ছে না। সন্ধ্যা থেকেই এখন গায়ে মোটা জামা কাপড়ে পরে শীত নিবারণ সম্ভব হয় না। রাতে ঠান্ডায় দুঃস্থ অসহায় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। শীত বস্ত্র না থাকায় তাদের প্রতি রাতে কষ্টে কাটাতে হচ্ছে। রাতে ও সকাল হলে বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন বয়োবৃদ্ধ যুবক, শিশু শ্রমজীবী মানুষ ও নারীরা।
হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া কৃষক আলী বলেন, আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। শীত অনেক কষ্টে আছি সকালে কাজে গেলে প্রচুর ঠান্ডা লাগে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। দিনের বেলাতে সূর্যের দেখা নাই। সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা লাগে প্রচুর পরিমাণে। সকালে কাজে যেতে পারি না ঠান্ডায় কারণে। রাতে কনকনে ঠান্ডায় কম্বলের অভাবে ঘুমাতে পারি না।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল-সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, শীতজনিত রোগের কারণে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ কনকনে শীতে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু ও বৃদ্ধ। শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগে বয়োবৃদ্ধ ও নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
লালমনিরহাট জেলা আবহাওয়াবিদ এর সঙ্গে মুঠোফোনে আলোচনা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, জানুয়ারি মাসে এই অঞ্চলে একাধিক শৈতপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। আমরা এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে এ জেলায় ১৬ হাজার পিচ কম্বল ও নগদ ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। তা পাঁচ উপজেলায় ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের পাঁশে এখন পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে এগিয়ে আসেনি। তিনি লালমনিরহাট জেলার সকল বিত্তবান এনজিও প্রধান ব্যাংক কর্মকর্তাদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে এলে শীতার্ত মানুষগুলোর কষ্ট লাঘব হবে বলে তিনি জানান।