শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না ভারত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার প্রধান আসামি পলাতক শেখ হাসিনা। ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে তৎপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তরর্বর্তী সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ ডিসেম্বর ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেয়া কূটনৈতিক পত্র গ্রহণ করে দিল্লি।
২৩ ডিসেম্বর কূটনৈতিক পত্র রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল চিবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ সম্পর্কিত একটি কূটনৈতিক পত্র বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আমরা হাতে পেয়েছি। তবে এ মুহূর্তে এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এদিন বিকেলে ভারতকে কূটনৈতিক পত্র পাঠানোর তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
এবার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধ প্রত্যাক্ষাণ করলো ভারত। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না। ভূ-রাজনৈতিক নানা বিষয় এবং প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্তের কারণে ভারত এ কাজ করবে না বলে বৃহস্পতিবার দ্য ইকনোমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ‘ইনডিয়া আনলাইকলি টু স্যাকরিফাইস বাংলাদেশ এক্স-পিএম শেখ হাসিনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনাকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কেননা তিনি ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশের অনুরোধ সাবধানতার সঙ্গে ভারত নিরীক্ষা করবে। এতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
উচ্চপর্যায়ের সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূ-রাজনৈতিক কারণ বিবেচনায় ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না। ভারত মনে করে-এ প্রত্যর্পণে রাজি হলে প্রতিবেশী মিত্রদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ভারতের দাবি, তাদের অতিথি গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এর মধ্যে দালাইলামাও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ভারতে শেখ হাসিনার নির্বাসন এটিই প্রথমবার নয়। ১৯৭৫ সালে তার বাবার হত্যার পর তিনি ভারতে নির্বাসিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছেন, উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং ভারতের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়িয়েছেন। এ বিবেচনায় প্রত্যর্পণ পর্যালোচনায় তারা সময় নেবেন। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী-রাজনৈতিক প্রকৃতির অনুরোধগুলো কার্যকর করার সুযোগও নেই। সূত্রগুলো মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে তার জন্য একটি অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইস্যুটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ বলে বিবেচিত হচ্ছে।