ইসরায়েল কেন গোলান মালভূমির দখল চায়, রহস্য কী?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে গোলান মালভূমি। সিরিয়া ও ইসরায়েলের মাঝখানে বাফার জোন অর্থাৎ সংঘাতমুক্ত বিশেষ অঞ্চল বলা হয় গোলান মালভূমিকে। কিন্তু দামেস্কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গোলানসহ আরও কয়েকটি এলাকা দখল করে নিয়েছে। যার নিন্দা জানিয়েছে আরব দেশগুলো।
গোলান হলো সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রায় ১৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এক পাথুরে মালভূমি। এলাকাটি ইসরায়েলের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্পর্শ করেছে। গোলান বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত লড়াইয়ের সময় গোলান মালভূমিজুড়ে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায় সিরিয়া। কিন্তু ইসরায়েল পাল্টা প্রতিরোধ নেয় এবং গোলানের ১২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়।
১৯৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে সিরিয়া গোলানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৭৪ সালে দুই দেশই অস্ত্রবিরতিতে সই করে। চুক্তির শর্ত মেনে দুই পক্ষকেই মালভূমির ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি লম্বালম্বি এলাকা ছেড়ে নিজ নিজ বাহিনীকে সরিয়ে নিতে হয়। এই এলাকাটি পরিচিত 'এরিয়া অব সেপারেশন' নামে। এরপর সেখানে জাতিসংঘ নিয়োজিত 'ডিজএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স' মোতায়েন করা হয় অস্ত্রবিরতির বিষয়টিতে নজর রাখার জন্য।
১৯৮১ সালে ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে নিজের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বাড়ায় এবং নতুন দখল করা ভূমিতে বসতি স্থাপনও শুরু করে। সিরিয়া বরাবরই বলে এসেছে, ইসরায়েল গোলান মালভূমি থেকে পুরোপুরি সেনাপ্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আর কোনো শান্তি চুক্তিতে সই করবে না। বাফার জোন উপেক্ষা করে এরিয়া অব সেপারেশনের কোনো কোনো পয়েন্ট পর্যন্ত বসতি সম্প্রসারণ করায় গত নভেম্বরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সিরিয়া ও জাতিসংঘ।
এই মালভূমি সিরিয়ার হামলা থেকেও ইসরায়েলকে এক ধরনের প্রতিরক্ষা দেয়, কারণ ইসরায়েল এখান থেকেই সিরিয়ার উপর হামলা করে এসেছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করার পর অনেক সিরিয়ানকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়। এখন সেখানে ৩০টিরও বেশি ইসরায়েলি বসতি আছে। এসব বসতিতে ২০ হাজারের মতো লোক বসবাস করে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর বিদ্রোহী সিরিয়ার সেনারা গোলান মালভূমিতে তাদের চৌকিগুলো ছেড়ে যেতে শুরু করে। ঠিক তখনই বাফার জোন অতিক্রম করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, তার বাহিনী এখানে সাময়িকভাবে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকবে।
সিরিয়ান সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে, যদিও এটা স্বীকার করেনি ইসরায়েল। এদিকে, সিরিয়ায় ইরায়েলের সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে আরব দেশগুলো। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটাকে সিরিয়ান ভূখণ্ডের ওপর দখলদারিত্ব এবং ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত লড়াই থেকে সরে আসার চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।