মাহমুদুর রহমানের লাশেই লুকিয়ে ছিলেন হারিস চৌধুরী, নেপথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ পিএম
২০২১ সালে সাভারে দাফন করা মাহমুদুর রহমান নামের মরদেহটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর। তার সঙ্গে মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর ডিএনএ এর মিল পাওয়া গেছে। হারিছ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।
বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ-সংক্রান্ত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী।
এর আগে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে সাভারের একটি মাদ্রাসার কবরে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে সমাহিত হারিছ চৌধুরীর লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশ অনুসারে, ২০২১ সালে সাভারের … ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে দাফন করা লাশটি গত ১৬ অক্টোবর কবর থেকে তোলা হয়। লাশটি উত্তোলনের পর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। যার মধ্য দিয়ে হারিছ চৌধুরীর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয়।
রিট আবেদনে প্রার্থনা ছিল, সাভারের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানসহ নিজ বাড়িতে দাফন করা। তারই ধারাবাহিকতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁকে তাঁর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা। হারিছ চৌধুরী মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।
কদিন আগেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটিতে তাকে জীবিত ধরেই খালাস দেওয়া হলো হাই কোর্টের রায়ে।
২০১৮ সালে বিচারিক আদালতে রায়ে তার যাবজ্জীবন সাজার রায়টি হয়েছিল। পলাতক দেখিয়ে মামলাটিতে তার বিচার হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিসও উঠেছিল।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। পরে তিনি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামে তার নানাবাড়ি চলে যান। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার অদূরে সাভারের একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাঁকে কবর দিতে বাধ্য করা হয়। সরকার সে সময় তাঁর প্রকৃত পরিচয় অনুযায়ী কোনো মৃত্যুসনদ দেয়নি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়নি।