বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রাণঘাতী অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের তালিকা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের অন্তত ৭৪৭ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দেশের একটি প্রথম সারির কাগজে রিপোর্ট করা হয়েছে। কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এসব কর্মকর্তা গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই গুলি করেছেন। তালিকাটি যাচাই-বাছাই করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ওই চার দিনে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহার থেকেই গুলি-বর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা গুলি করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানেননি। গুলি করার নির্দেশদাতা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সূত্র বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আহ্বান করেছিল। ১৮ থেকে ২১ জুলাই—এ চার দিনে দেশে সবচেয়ে বেশি গুলি চলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশের ৩৫৭ সদস্য এ সময় প্রায় ৮ হাজার প্রাণঘাতী গুলি করেন। এতে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত এবং কয়েক শ আহত হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১১৫টি মামলা হয়। এগুলোর মধ্যে ১০০টির এজাহার পর্যালোচনা করে ‘লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে আইনজীবীদের একটি সংগঠন। সেই পর্যালোচনার একটি প্রতিবেদন সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে দিয়েছে। সেখানেই ওই চার দিনে প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়েছে।

ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭৫৪ জন সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পুলিশ সদস্য হলেন ৭৪৭ জন। যাঁদের মধ্যে কনস্টেবল ৪৬৭ জন, সহকারী উপপরিদর্শক ১০৬, উপপরিদর্শক ১৫৭, পরিদর্শক দুজন এবং এএসপি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। বাকি ১৪ জন পুলিশের নায়েব, সুবেদার ও চালক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৮-২১ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের ১২টি থানা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ১০টি থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নির্বিচার গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ প্রাণঘাতী গুলি, রাবার বুলেটসহ অন্তত ২৬ হাজার ২৩টি গুলি ছোড়ে।

আন্দোলন দমাতে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কোনো কর্মকর্তা সরাসরি কিছু বলেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েক শ পুলিশ সদস্যের তালিকা পাওয়া গেছে। তাঁদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।