এখনও ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা প্রভাবশালীদের পকেটে!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৫ পিএম
কিছু প্রভাবশালী গ্রাহক আদালত থেকে স্থগিতাদেশ বা স্টে অর্ডার নিয়ে ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, এসব ঋণের বেশির ভাগই খেলাপিযোগ্য। কিন্তু আদালতের স্টে অর্ডার নেওয়ার কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে ঋণগুলো, যা ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বিচারব্যবস্থা ধীর গতিসম্পন্ন হওয়ায় এর সুযোগ নেন অনেক ব্যবসায়ী। কোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিলে ঋণ পরিশোধ না করেও বহুদিন নিশ্চিন্ত থাকা যায়। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক সময় পেতে এমন কাজ করে থাকেন ব্যাংকের প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা।
অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে লুটেরাদের পকেটে। ভুয়া এফডিআরের কাগজপত্র জমা দিয়ে, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা হয়ে এমনকি জাল দলিলেও অনুমোদন হয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। অথচ একটি কেলেঙ্কারিরও বিচার হয়নি। সাজা হয়নি অভিযুক্তদের কারোরই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। বছরের পর বছর মামলা চলছে। অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছেন, অনেকে জামিন পেয়েছেন। কেউ বা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই লাপাত্তা। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না কোনো ঘটনার। সাজা হয়নি সংশ্লিষ্ট অপরাধীর। টাকাও ফেরত আসেনি। বিচার না হওয়ায় নামে-বেনামে ঋণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের মামলার স্তূপ বেড়েই চলেছে। গত মার্চ শেষে দেশের ৬০টি ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৫৯৩টি। এসব মামলায় আটকে আছে প্রায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের তিন মাসে মামলার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৯টি। আর জড়িত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মূলত আগের মামলা নিষ্পত্তিতে গতি কমে যাওয়া ও নতুন মামলা বেড়ে যাওয়ায় মামলার স্তূপ কমছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বের করা ঋণ স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বারবার সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার পরও এসব ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না খেলাপিরা। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা হলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে খুবই কম।