‘ফার্স্ট ক্লাস’ পেয়ে স্নাতক পাস করলেন শহীদ আবু সাঈদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, তাদেরই অন্যতম হচ্ছেন আবু সাঈদ। যার মৃত্যুর পরপরই সারাদেশে আন্দোলনে নতুন মোড় নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে । এরপরই হাসিনা সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। আন্দোলনের সেই আইকন শহীদ আবু সাঈদেরে আজ অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৩০ পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০ অক্টোবর দুপুরে বেরোবির উপাচার্য প্রফসর ড. মো. শওকত আলীর অনুমোদনক্রমে প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য ওঠে আসে।
উত্তীর্ণদের ফলাফল প্রকাশ করার সময় উপাচার্য বলেন, “আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থী শহিদ আবু সাঈদ আমাদের মাঝে আর নেই। কিন্তু তার স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলো। ৬৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে আবু সাঈদ মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করে পাশ করেছেন। এটা আমাদের ভালো লাগার বিষয়। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আমরা শোকাহত। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।”
ফলাফল প্রকাশকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর ড. মো. তাজুল ইসলাম, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. ইলিয়াছ হোসেন এবং অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ফিরোজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে আবু সাঈদ মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত ১৬ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
ছোটবেলা থেকে মেধার পরিচয় দিয়ে বেড়ে উঠছিলেন আবু সাঈদ। তার লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করার মতো সামর্থ্য পরিবারের ছিল না। নিজের পড়ালেখার ব্যয় নিজেই মেটাতেন। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ারও উপক্রম হয়েছিল কখনো কখনো। আবু সাঈদের বাড়িতে থাকার আলাদা কোনো ঘর ছিল না। দুভাই এক বিছানায় থাকতেন। বাবা সামান্য জমি থেকে একটা অংশ বিক্রি করেছেন ঘর তোলার জন্য। দেয়ালটুকু কেবল তুলেছেন।
আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা বলছিলেন সাঈদ বড় চাকরি করবে- এটা তার স্বপ্ন ছিল। ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলে সেই স্বপ্ন পূরণ করা যে কিছুটা কঠিন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনিও যুক্ত হন শহীদ আবু সাঈদ। আবু সাঈদ পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ার দিনমজুর মকবুল হোসেনের ছেলে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আবু সাঈদ ছিলেন সবার ছোট।