ধানের ব্যাপারী থেকে যেভাবে খাদ্যমন্ত্রী হন সাধন চন্দ্র মজুমদার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের জীবনটা ছিল সাদামাটা। তার শুরুটা ছিল ব্যবসা দিয়ে। নওগাঁর হাটে খুচরায় ধান-চাল কিনে গরুর গাড়িতে বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করে তিনি ধান-চালের পাকা ব্যাপারীতে পরিণত হন। ৮০-এর দশকে নিজ এলাকায় একটি ধান ভাঙার কল প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গিয়েছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
১৯৮৪ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান এবং পরে উপজেলা চেয়ারম্যান হন। ২০০৮ সালে নওগাঁ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৮ সাল থেকে হাসিনার সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে মন্ত্রী হওয়ার পর সাধনের সম্পদ বেড়েছে শতগুণ। এলাকার ও মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে বেপরোয়া কমিশন আদায়, সারা দেশের ধান-চালের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চাল আমদানিতে দুর্নীতি, এলাকার পুকুর, জলাশয়, জমি দখলসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নওগাঁর রাজনীতিতে একচ্ছত্র অধিপতিও ছিলেন তিনি।
তার ভাই মনোরঞ্জন ওরফে মনা মজুমদার, ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, মেয়ে তৃণা মজুমদারও এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সরকার পতনের পর তারা সবাই এখন আত্মগোপনে। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুরে সাধনের দুই বাড়ি তালাবদ্ধ। নওগাঁ শহরের বাড়িটিতেও কারও কোনো আনাগোনা নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, সংসদ-সদস্য হওয়ার পর থেকেই সাধন বাবু সবকিছু নিয়ন্ত্রণে একটি পারিবারিক সিন্ডিকেট করে ফেলেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেননি। অনেকের ওপর অত্যাচার করেন কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।
রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকজন অটো রাইস মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ধান চালের ক্রয়, সংগ্রহ, আমদানি মজুত-সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সাধন নিজে ও তার ভাই মনা মজুমদার। ভারত থেকে চাল আমদানির বরাদ্দ পেতে ব্যবসায়ীরা মনার কাছে ধরনা দিতেন। এজন্য তাকে দিতে হতো মোটা অঙ্কের কমিশন। ধান চালের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহেও মনা মজুমদার ছিলেন শেষ কথা। সাধন ঘনিষ্ঠ বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডজনখানেক মিল মালিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন চালের মজুত ও বাজার।
একাধিক খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাতিজা রাজেস, মেয়ে তৃণা ও জামাই আবু নাসের মন্ত্রণালয়সহ খাদ্য বিভাগের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নে ও বদলিতে বাণিজ্য করেছেন। বিশেষ করে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, খাদ্য পরিদর্শক, উপজেলা-জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে বদলিতে কোটি টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য হতো। শুধু তাই নয়, সাধন পরিবারের বিরুদ্ধে নওগাঁর তিন উপজেলা সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুরের সরকারি-বেসরকারি পুকুর-জলাশয় দখলের অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানান, শুধু পুকুর-জলাশয় নয়, এলাকার হাট-বাজারের ইজারা পেতেও সাধনের ভাই মনাকে দিতে হতো টাকা। মনার নির্দেশে হাট-বাজারের নিলাম দেখানো হতো কাগজ-কলমে। মনা যার কাছে বেশি টাকা পেতেন তাকেই দিতেন হাট-বাজারের ইজারা।