ফেনীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী অস্ত্রধারীরা সবাই হাজারির লোক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পিএম
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা ভোটে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের নামে একটি করে পিস্তল ও রাইফেলের লাইসেন্স নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এর মধ্যে রাইফেলের লাইসেন্স নেন ২০১৬ সালে। পিস্তলের লাইসেন্স নেন ২০১৮ সালে। নিজাম হাজারী তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগমের নামেও ২০২০ সালে একটি রাইফেলের লাইসেন্স করান। যদিও তিনি গৃহিণী।
নিজাম হাজারীর মতোই দুটি করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন ফেনীর আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের আরও পাঁচজন নেতা। সব মিলিয়ে নিজাম হাজারী, তাঁর স্ত্রীসহ ফেনীর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৩০ জন নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স করেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্ত্রের লাইসেন্স তাঁরা পেয়েছিলেন। এসব অস্ত্রসহ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে গত জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ দমনের কাজে।
ফেনীর শহরের পাশে মহিপাল এলাকায় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা গুলি ছুড়ছেন, এ রকম একটি ভিডিও তখন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার ঠিক এক দিন আগে গত ৪ আগস্টের। সেদিন গুলিতে মহিপালে ৯ জন নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজন শিক্ষার্থী। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করছেন তিন যুবক। তাঁদের হাতে একে-৪৭–এর মতো দেখতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র।
ফুটেজে যে তিনজনকে দেখা গেছে, তাঁদের একজন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বাবলু, আরেকজন ফেনী সদরের কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ। বলে জানা গেছে। বিষয়টি পুলিশও নিশ্চিত করেছে। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সেদিন মহিপাল এলাকায় অন্তত ৩৩ জনের হাতে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর অনুসারী।
লাইসেন্স করা অস্ত্রের পাশাপাশি নিজাম হাজারীর অনুসারীদের কাছে প্রচুর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশের একাধিক সূত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় নিজাম হাজারীর অনুসারীদের ফেনী শহরে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ওই সব ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নীরব থাকত। তবে ২০১৫ সালের ৬ জুন র্যাবের হাতে নিজাম হাজারীর ২৬ জন সহযোগী দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ একবার ধরা পড়েছিলেন। পরে তাঁদের সবাই বিভিন্ন সময়ে জামিনে বেরিয়ে যান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, গত ৪ আগস্ট মহিপাল এলাকায় একে-৪৭–এর মতো দেখতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলি ছুড়েছেন বাবলু। সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজী ও হারুন মজুমদারসহ ছাত্রলীগ-যুবলীদের নেতারা।
ফেনী জেলা প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফেনী জেলায় ব্যক্তিপর্যায়ে ১০৩টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩০ জন। আর তারা সবাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে তাঁরা নিজেদের অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করেছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীগুলো নিশ্চিত হয়েছে।