হারুনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সমন্বয়ক আবু বাকের

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ এএম
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারকে হটাতে এক হয়েছিল ছাত্র-জনতা। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু, এরপর শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম। এদেরই অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় ডিবি হারুনের নির্মম নির্যাতনের কথা ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন তিনি।
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে ছয়জন সমন্বয়ককে গুম করা হয়েছিল তাদের মাঝে আবু বাকের মজুমদার একজন। সম্প্রতি ডিবি হারুনের কার্যালয়ের অমানবিক নির্যাতন নিয়ে তার ফেসবুক একাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। যা নিয়ে ব্যাপক ব্যাপকা আলোচনা শুরু হয়। তিনি লিখেন, ডিবি হারুনের যেই ভাতের হোটেল চিনেন, সেই হোটেলে হারুন খাচ্ছিলো। ডিবি হেফাজতের দ্বিতীয় দিন আমাকে, নাহিদ ভাইকে, আসিফ ভাইকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। হারুনের ব্যবহার ছিলো অত্যন্ত বাজে এবং হল ছাত্রলীগের উপসম্পাদক ক্যাটাগরির।
আমাদেরকে বলতেছিলো, আমি নেতা ছোট করি, নেতা বানাই না! দেখোস নাই, নূরুরে কি করে ছেড়ে দিছি! নূরু এখন রিমান্ডে কান্নাকাটি করে। এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে, “তুই শিবির”! আমি বলি, “না আমি শিবির না”! সে আবারো (একটু উচ্চ শব্দে) বলে, “না, তুই শিবির”।
আমি তার থেকে উচ্চবাচ্য করায় সে প্লেট চূড়ে ফেলে দিয়ে এক অফিসার কে ইশারা দিয়ে বলে আমাদেরকে নিয়ে যেতে। আমাদের তিনজনকে তিনটি আলাদা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। রুমে যাওয়ার ৩/৪ মিনিট পর দুইজন লোক এসে আমাকে দরজায় আসতে বলে, তাদের হাতে ছিলো জম টুপি এবং হাতকড়া।
বুঝে গেছিলাম, হারুনের সাথে পার্সোনালিটি দেখানোর জন্য খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। দরজায় আসার সাথে সাথেই টুপিটি পরায়, তারপর হাতকড়া পরায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো, দুনিয়ার আলো কিছুই দেখা যায়না, ভয়ংকর একটা পরিবেশ।
যাই হোক, তারপর লিফটে, আবার হেঁটে, আবার সিড়িতে,,, এভাবে কোনো একটা রুমে নিয়ে গেলো। একটা জিনিস বারবার মাথায় আসছিলো যে আমাকে মেরে ফেলে কিনা, ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে ত বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সাধারণ ঘটনা ছিলো।
আমাকে বেধে আবার জিজ্ঞাবাদ শুরু করে। ওদের কথায় বুঝতে পারছিলাম যে, ওরা মোটামুটি আমাদের সবকিছু জানে। আমাকে শুরুতেই বলে, “তুই ত জুনের ৯ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশকে সংগঠিত করতে লিড দিছোস, তোরে এগুলো কে শিখাইছে? তোর ত বয়স বেশিনা! ট্রেনিং পাইছোস কই?”
উত্তরে আমি বলি, “আমি ছাত্রসংগঠন করি, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব, সংগঠন শুরুতে দাড় করানোর জন্য এবং পরবর্তীতে বিস্তারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমি মানুষকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি” তারপর কিছুক্ষণ প্যাচায়!
তারপর জিজ্ঞেস করে, “তোর গুরু কে?” উত্তর দেই আমার কোনো গুরু নাই, শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থে সংগঠন করি, আর আন্দোলনও ঠিক একই কারণে করে যাচ্ছি। এই বিষয়েও আরো অনেক সাবস্টিটিউট প্রশ্ন উত্তর হয়।
এরকম আরো অসংখ্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তারপর পাশের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়, নিয়ে হাত উপরে ঝুলিয়ে বাধা হয়। একপর্যায়ে নিতম্বে মোটা শক্ত কোনো লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে, আর আমি চিল্লানো দিয়ে উঠি, আর ওরা বলে, প্রাইমিনিস্টারকে ধন্যবাদ দিয়ে বিবৃতি দিবি? আমি বলি, “না”।
এরকমভাবেই চলতে থাকে। খুব ভয়ংকর লাগছিলো এবং ব্যাথা তূলনামূলক বেশি পাচ্ছিলাম। আমি পানি চাই, বোতলের চিপি করে এক চিপি পরিমাণ পানি দিয়েছিলো। জিহবা-গলা শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে গিয়েছিলো।
হাঁটতে গিয়ে দেখি হাঁটা যাচ্ছেনা, একপর্যায়ে ওদের দুই কাধের উপর আমার দুইহাতের ভর দিয়ে অনেক কষ্টে আমাকে যে রুমে রাখা হতো সেই রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।