গুজব আর উস্কানি দিয়ে পাহাড়ে সহিংসতা ছড়ানো কারা এরা?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
কয়েকদিন দিন ধরে অশান্ত দেশের পাহাড়ি অঞ্চল। ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে চোর সন্দেহে খাগড়াছড়িতে মামুন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। উত্তাপের শুরু সেখান থেকে। তারপর থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্তব্য বাকি দুই জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। তবে প্রথম দিকে বাস্তব ঘটনা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি মাত্রায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গুজব ছড়িয়েছে, যা পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে টেনে নিয়েছে।
ফেসবুকে গুজব, অপতথ্য ও ভুল ছবি ছড়ানোর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতাও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গমাটিতে চারজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে প্রশাসনকে।
এরপর থেকে ছড়াতে থাকে গুজব। ছড়াতে থাকে আতঙ্ক ও উত্তেজনা। গুজবে সয়লাব হয় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো। কতিপয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে উসকানিমূলক ছবি ও পোস্ট দিয়ে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করা হতে থাকে। এমনও চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে উত্তেজিত তরুণরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় পাহাড়ের বাসিন্দাদের।
রিপন তাঞ্চাঙ্গা নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন “আজ থেকে পাগাড়ের স্বাধিনতা ঘোষনা করা হলো , তারিখটা লিখে রাখো ”। এভাবেই সহিংসতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই রিপন তাঞ্চাঙ্গা চট্টগ্রাম বিশ্ববিধ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী। চবি ছাত্রলীগের একটা গ্রুপকে ১৫-১৬ সেশন থেকে লিড দিতো রিপন। এখন সে পাহাড়ের স্বাধীনতা ঘোষণা করতেছে। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পীতভাবে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রচারণা চালাচ্ছে।
রিপন তাঞ্চাঙ্গার এই পোষ্টের পর সমালোচনার ঘড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকেই লেখেন পাহাড়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া ছাত্রলীগ নেতা "রিপন তাঞ্চাঙ্গা" কে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। আবার অনেকেই বলছেন তারা এবার ’স্বাধীনতা লীগ’ হয়ে ফিরে এসেছে।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে ইস্যু তৈরি করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র দেখছেন অনেকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘পাহাড় নিয়ে বহু বছর ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলে আসছে। সশস্ত্র সংগঠনগুলো সাম্প্রদায়িক সংকট তৈরি করে পাহাড়কে অস্থির রাখতে চায়। এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে জুমল্যান্ড করার স্বপ্ন দেখছে। এখানে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সচেতন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কেউ যেন গুজবে কান না দেয়। বর্তমানে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষায় প্রত্যেককে সংযতভাবে চলার আহ্বান জানাই।