প্রকাশ্যে এল শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার উড়োজাহাজটির রুট

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কীভাবে কোন বিমান কিংবা উড়োজাহাজ করে ভারতে গিয়েছিলেন তিনি, এ ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজটি গত ৫ আগস্ট ঢাকা ছাড়ার সময় একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে এবং এর ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের না জানাতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়। ট্রন্সপন্ডার হলো একটি উড়োজাহাজের অবস্থান, নাম, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানাতে থাকে। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগে এর ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি বলে বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে ফ্লাইট এজেএএক্স১৪৩১ এর প্রোগ্রেস স্ট্রিপের একটি অনুলিপি পাওয়া গেছে। একটি ফ্লাইটের প্রোগ্রেস স্ট্রিপ হলো এমন একটি ছোট কার্ড, যার মাধ্যমে এটিসি আকাশে উড়তে থাকা নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ ট্র্যাক করে, যাতে অন্য কোনো উড়োজাহাজের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ না হয়।
এতে লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস উড়োজাহাজের ককপিট ও ঢাকার এটিসির মধ্যে রেডিও যোগাযোগের একটি রেকর্ডিংও রয়েছে। ফ্লাইট প্রোগ্রেস স্ট্রিপ অনুযায়ী, হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ৫ আগস্ট বিকেল ৩টা ০৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারবেস থেকে উড্ডয়ন করে। এর মাত্র ৩০ মিনিট আগে লাখো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাসিনার তৎকালীন সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে।
হাসিনার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে প্রথমে দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের। এটি পিছিয়ে দুপুর ৩টায় করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিকেল ৪টার দিকে ভাষণ দেন।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কভিত্তিক নাগরিকটিভি ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াকার বলেছিলেন, হাসিনা যে পালিয়ে যাচ্ছেন, তা তিনি জানতেন না।
তিনি বলেন, 'আমি যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, তখন কেউ একজন আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তিনি পালাচ্ছেন। আমি জানতাম না যে তিনি দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, তিনি যদি থেকে যেতেন, তাহলে সেটা তার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতো। অবশ্যই কেউই চায় না যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হোক। পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল ছিল।'
হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ঢাকা-কলকাতা রুটের ওয়েপয়েন্ট 'বিইএমএকে' পৌঁছানোর পর ট্রান্সপন্ডার ও স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম চালু করে। এরপর থেকেই এটি রাডারে দেখা যায়। ঢাকা বিমানবন্দরে রাডার স্ক্রিনের স্ক্রিন গ্র্যাব অনুসারে, এটি প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করে। পরবর্তীতে সেটি ভারতের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটির দিকে যায়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্ভবত উড়োজাহাজটি সরাসরি দিল্লি না গিয়ে প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করার কারণ হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় যতটা সম্ভব কম সময় থাকতে চেয়েছিল।
ঢাকা থেকে দিল্লি যেতে উড়োজাহাজগুলো রাজশাহীর ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং এই রুটে ঢাকা থেকে কলকাতা রুটের চেয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় কয়েক মিনিট বেশি থাকতে হয়।
হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইটটিকে স্কোয়াক কোড ৪১৩১ দেওয়া হয়েছিল। এটিসি তার আকাশসীমায় উড়তে থাকা প্রতিটি উড়োজাহাজকে চার সংখ্যার একটি কোড দিয়ে চিহ্নিত করে। উড্ডয়নের আগে ক্রু ম্যানুয়ালি এই কোডটি উড়োজাহাজের ট্রান্সপন্ডারে প্রবেশ করে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উড়োজাহাজ কাছাকাছি আসার বিষয়ে একে অপরকে অবহিত করতে ঢাকা ও কলকাতার এটিসির মধ্যে সরাসরি হটলাইন রয়েছে। উড়োজাহাজটি সেকেন্ডারি রাডারে দেখা না গেলেও ককপিট ক্রুরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং সম্ভবত কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রেখেছিল।
ইন্ডিয়া টুডে ৬ আগস্ট জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকতেই ফ্লাইটটির ওপর নজরদারি শুরু করে। সূত্রের দাবি, হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা বা ফ্লাইট ক্রু ও সিকিউরিটি সার্ভিসেস ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যরা কেউই ঢাকা ছাড়ার আগে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেননি।হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল এবং রেহানার ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট।