বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপে নাজেহাল হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানের দাপটে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকারের মসনদ। ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে শেখ হাসিনা সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই তাকে তৈরি হয়ে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে হয়। শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামরিক বিমান যখন যাত্রা করে তখন সেখান থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে আগাঁরগাওয়ে লাখো মানুষের স্রোত। কিছু সময়ের মধ্যেই গণভবন, সংসদ ভবন এলাকা দখলে নেয় আন্দোলন বিজয়ী জনতা। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের দলীয় মন্ত্রী-এমপি এবং সিনিয়র নেতারা কে কোথায় গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। বলা হচ্ছে সিনিয়র নেতাদের অনেকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন আবার কেউ কেউ রয়েছেন আত্মগোপনে। 

জানা গেছে, ৫ আগস্ট সামরিক বিমানে করে শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা যখন ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন সেসময় তাদের দুইবোনের পরিবারের আর কোনো সদস্য বাংলাদেশে ছিলেন না। সেসময় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে ভারতের দিল্লিতে কর্মরত ছিলেন। দিল্লিতেই মা এবং খালার সঙ্গে পুতুলের সাক্ষাৎ হয়। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বৃটিশ মন্ত্রী, তিনি লন্ডনে বসবাস করেন। শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকও সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না।

গেল ৩ আগস্ট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। তার বড়ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে এ নিয়ে সংগঠনের কারো কাছেই কোনো তথ্য নেই। যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশ আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় বিদেশে চলে গেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেননি বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তিনি তার ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বর্তমানে তিনি দেশে নাকি বিদেশে চলে গেছেন তা স্পষ্ট নয়।