নারীদের শরীরের মাপ নিতে পারবে না পুরুষ দর্জিরা!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম
এবার পুরুষ দর্জিদের উপর বিচিত্র এক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পোশাক বানানোর জন্য নারীদের শরীরের কোনো ধরনের মাপ নিতে পারবেন না পুরুষ দর্জিরা। বিচিত্র এ বিধিনিষেধের কারণে অনেক দর্জি কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। অনেকে আবার দেশ ছেড়েও চলে গেছেন। পাশাপাশি ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রমও হয়েছে। বিশ্বের কোন দেশে এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সুমাইয়া মিতু।
এবার নারীদের পোশাক বানানোর জন্য পুরুষ দর্জিদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলো আফগানিস্তানের তালেবান সরকার! আর এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে।
দেশটি থেকে পশ্চিমের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর প্রায় বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর থেকেই দেশটিতে নারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। সবশেষ এবার এক বিচিত্র বিধিনিষেধের আওতায় পড়লো দেশটির নারীরা।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকারের পুরুষ দর্জিদের বরাত দিয়ে জানায়, তারা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সদাচার প্রসার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নারী পোশাক তৈরি না করার মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছেন।
দর্জিরা জানান, এ ধরনের বিধিনিষেধে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে, পারওয়ান প্রদেশের স্থানীয় কর্মকর্তারা এসব দাবি অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, দর্জিদের শুধু কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে।
পারওয়ানের গভর্নরের মুখপাত্র হিকমাতুল্লাহ শামিম বলেন, 'তাদের পোশাক তৈরির কাজের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সদাচার প্রসার মন্ত্রণালয় শুধু দর্জিদের কাছে আসা নারীদের শরীরের মাপ নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে'।
এদিকে, পারওয়ানের দর্জি সমিতির প্রতিনিধিদের মতে, এই বিধিনিষেধ আরোপের ফলে প্রদেশের বেশিরভাগ দর্জি কাজ হারিয়েছেন এবং তাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
অন্যদিকে, মুখতার সেকান্দারি নামের সেখানকার এক দর্জি টোলোনিউজকে জানান, 'দোকানের ভাড়া হচ্ছে ১০ হাজার আফগানি। এছাড়াও অন্যান্য খরচও আছে যা নারীদের পোশাক সেলাই করেই বেশিরভাগ ব্যয় নির্বাহ করেন তারা। কিন্তু পারওয়ানের গভর্নরের পক্ষ থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলেও জানান তারা।
চারিকার হস্তশিল্পী ও দোকান মালিক সমিতির এক প্রতিনিধি বলেন, 'যেসব দর্জি মেয়েদের পোশাক সেলাই করতেন, তারা সবাই জীবিকা হারিয়েছেন এবং এমনকী কেউ কেউ দেশ ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন।
এমন এক সময় এ ধরনের নির্দেশনা এলো, যখন ইতোমধ্যে দেশের তরুণদের অনেকেই গত ২ বছরে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন।
ঠিক সেই সময়ে, এমন সিদ্ধান্ত দেশটির দর্জিদের জন্য ব্যবসা পরিচালনায় কি ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলতে যাচ্ছে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা ।