২০৫০ সালের মধ্যে 'জেট জিরো' লক্ষ্য: বিমান খাত হবে পরিবেশবান্ধব

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ পিএম

ছবি : ইন্টারনেট
বিমানের ইঞ্জিনের গর্জন, পাইলটের স্বস্তির ঘোষণা—এই কল্পনাই বাস্তব হয়ে উঠতে পারে ‘জেট জিরো’ ধারণায়। এর লক্ষ্য হলো বিমান ভ্রমণকে পুরোপুরি কার্বনডাইঅক্সাইড নিরপেক্ষ করা।
২০২২ সালে বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘জেট জিরো’ পরিকল্পনা চালু করে, যার লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ‘নেট জিরো’ আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করা। পরবর্তীতে লেবার সরকারও এই উদ্যোগকে সমর্থন করে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দর পরিচালনা সম্পূর্ণ নির্গমনমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে চ্যালেঞ্জগুলো বিশাল। লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের একপাশের ফ্লাইটে একজন যাত্রী গড়ে ৩০৯ কেজি কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত করেন। এই পরিমাণ কার্বন শোষণ করতে ১০টি পূর্ণবয়স্ক গাছের এক বছরের সময় লাগে। বিমান খাতের নির্গমন কমাতে হলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন পূর্ণবয়স্ক গাছ লাগানো প্রয়োজন, যা যুক্তরাজ্যের জন্য ওয়েলসের সমান একটি বন তৈরি করার সমান।
টিকিটের দাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কনজারভেটিভ সরকারের বিমানমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্রাউন বলেছেন, টিকিটের মূল্য সামান্য বাড়লেও যাত্রীদের তেমন বোঝা হবে না। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডিটার হেলম মনে করেন, খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং রাজনীতিবিদরা জনগণকে তা জানাতে চান না।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পরিচালন পদ্ধতির উন্নতি এবং টেকসই জ্বালানি (এসএএফ) ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ১৯৬৯ সালে বোয়িং ৭৪৭-এ হাই-বাইপাস টার্বোফ্যান ইঞ্জিনের সূচনা থেকে বিমান খাত ক্রমশ উন্নত হয়েছে। আধুনিক বিমানের শার্কলেট উইং ড্র্যাগ কমিয়ে প্রতি ফ্লাইটে গড়ে ৪% জ্বালানি সাশ্রয় করে।
রোলস রয়েসের নতুন ‘আলট্রাফ্যান’ ইঞ্জিন গড়ে ১০% জ্বালানি সাশ্রয় করবে। তবে এটি ২০৩০ সালের আগে বাণিজ্যিক বিমানে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।
বিমানের কার্বন নির্গমনের মূল উৎস জীবাশ্ম জ্বালানি। এই সমস্যা মোকাবিলায় এসএএফ একটি বিকল্প, যা নবায়নযোগ্য বায়োমাস ও বর্জ্য থেকে তৈরি। ২০০৮ সালে লন্ডন থেকে আমস্টারডামে প্রথম এসএএফ-চালিত ফ্লাইট পরিচালিত হয়। তবে যুক্তরাজ্যের এসএএফের বড় অংশ রান্নার তেল থেকে তৈরি, যার কিছু অংশ এশিয়া থেকে পরিবহন করা হয়। এটি পরিবহনেও কার্বন নির্গমন ঘটে।
এসএএফ তৈরিতে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিশাল মাত্রায় নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া এটি বাস্তবায়ন কঠিন। ডিটার হেলম বলেন, "টেকসই জ্বালানি বলতে কিছু থাকলেও, বর্তমান জ্বালানির তুলনায় এগুলো কম দূষণকারী। তবে এত বড় পরিসরে এটি কীভাবে সম্ভব হবে তা এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ।"
বিমানের নির্গমন কমানোর আরেকটি উপায় হলো রুট সরলীকরণ। বর্তমান বিকন নেটওয়ার্কের পরিবর্তে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরল রুট তৈরি করা সম্ভব, যা জ্বালানি সাশ্রয় করবে। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে বিমানগুলোকে ৪০ মাইল দূরত্ব বজায় রাখতে হলেও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা কমিয়ে ১৪ মাইল করা সম্ভব।
‘জেট জিরো স্ট্র্যাটেজি’ অনুযায়ী, রুট সরলীকরণ এবং অন্যান্য উদ্যোগে ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন ১৫% কমানো সম্ভব হবে। তবে ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসেসের পরিচালক ক্রিস নরসওয়ার্থি বলেন, "এটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। জাতীয় অবকাঠামোর পরিবর্তন বহু বছরের পরিকল্পনার ফল।"
অন্যদিকে, ইলেকট্রিক বিমান প্রযুক্তি নিয়েও কাজ চলছে। উদ্ভাবক স্টিফেন ফিটজপ্যাট্রিকের ভিএক্স-৪ কার্বন ফাইবার বিমান লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতে চলে। তবে ৮০০ কেজি ব্যাটারির ওজন বিমানের দূরত্ব সীমাবদ্ধ করে।
ফিটজপ্যাট্রিক বলেন, "শুরুতে এটি ১০০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। ভবিষ্যতে হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।"
হাইড্রোজেনচালিত বিমান প্রযুক্তি নিয়েও কাজ চলছে। ব্রিটিশ-আমেরিকান কোম্পানি জিরোএভিয়া আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ৮০ সিটের হাইড্রোজেনচালিত বিমান আকাশে উড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
২০৫০ সালের মধ্যে ‘জেট জিরো’ লক্ষ্য অর্জন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা সময়ই বলবে। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে এটি বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
অনুবাদ : ইসলামুল হাফিজ নির্জন