নতুনদের ওপর আস্থা রাখতে বললেন সালাউদ্দিন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সবকিছু ঠিক থাকলে এ মাসে বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে জাতীয় দলে যোগ দেবেন সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। জাতীয় দলে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৬ সালে। নতুন করে টাইগারদের সঙ্গে দায়িত্বটা আপাতত আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে বাংলাদেশ দল নিয়ে প্রত্যাশা এবং কোচ হিসেবে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন অভিজ্ঞ এই কোচ।
প্রথম ধাপে সালাউদ্দিন ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ ও সহকারী কোচ হিসেবে। এরপর ২০১০-১১ সালে ছিলেন বিসিবির একাডেমির বিশেষজ্ঞ কোচ। প্রথমবার বিসিবির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে সালাউদ্দিনের কোচিং। ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনেছে যাদের হাত ধরে, তার অধিকাংশই এখন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পালাবদলের সময়টায় আরো একবার বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে এসেছেন সালাউদ্দিন। এবার তার পদের নাম সিনিয়র সহকারী কোচ, চুক্তি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। তবে সব ঠিক থাকলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যেতে পারে বিসিবি। দায়িত্ব নেয়ার পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আরো একটি সোনালি প্রজন্মের জন্ম দেয়ার লক্ষ্যের কথাই জানিয়েছেন তিনি। নতুন যে সব খেলোয়াড় আছে তাদের নিয়ে বেশ আশাবাদী সালাউদ্দিন। তবে তাদের গাইডলাইন দরকার, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি, ‘যখন সাকিব, তামিম ও মুশফিকরা এসেছিল তখনো তারা টপ খেলোয়াড় হয়নি। তারা আসলে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে তাদের ইচ্ছা এবং নিজের মোটিভেশনের কারণে একটা পর্যায়ে আসছে। এই ছেলেদের যে ওই মোটিভেশনটা নেই, সেটা বলা যাবে না। তবে তাদের নিজেদের প্রমাণ করার জন্য সময় দিতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে ভালো ফর্মে নেই টাইগাররা। সমস্যা কোথায় পরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আসলে সরাসরি তো বলা যাবে না সেটা টেকনিক্যালি সমস্যা নাকি, মানসিক সমস্যা নাকি অনুশীলনের সমস্যা। সেটা সামনাসামনি কাজ না করলে বোঝা যাবে না। এটার জন্য তো আমাদের অনেক কোচিং স্টাফ আছে তারা তো ভালো জানে খেলোয়াড়রা ভালো জানে। আমার মনে হয় সমস্যাটা খোঁজা হচ্ছে।’
জাতীয় দলের কোচিংয়ে ফেরার প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে আমি যদি আরো একটা প্রজন্মকে সাহায্য করতে পারি, তাহলে সেটা আমার নিজের কাছেও ভালো লাগবে।’ গত কিছুদিন ক্রিকেট অনুরাগী মানুষদের কাছে সালাউদ্দিনের জনপ্রিয়তারও প্রমাণ মিলেছে। সমর্থকদের প্রত্যাশার প্রতিদানও দিতে চান সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়াও নৈতিক দায়িত্ব হয়ে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত সময় যতটুকুই হোক, আমি হয়তো নাটকীয়ভাবে অনেক চেঞ্জ করতে পারব না। কিন্তু আমি যদি কারো জীবনে সামান্যতম প্রভাব রাখতে পারি, সেটাই মনে করি সার্থকতা।’
এর মধ্যেই মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে টাইগারদের টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের অনুশীলনে সালাউদ্দিনকে দেখা গেছে। আগামী কয়েক মাসে তার কাজের ধরন কী হতে পারে, সেই প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু আমি সহকারী কোচ, হেডকোচ আছে এখানে, তার দর্শনটা আমাকে আসলে বুঝতে হবে। আমার দায়িত্ব তাকে সাহায্য করা। এর সঙ্গে খেলোয়াড়দের যতটুকু পারি সাহায্য করা। আমার ভূমিকাটা হয়তো ভিন্ন হবে আগেরবারের তুলনায়।’ পরে যোগ করেন, ‘চেষ্টা করব আমাদের ছেলেরা যেন আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হয়। সেই সঙ্গে আমাদের যে বিদেশি কোচরা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা যেন আরেকটু ভালো হয় সেদিকে লক্ষ রাখব।’
এদিকে উইন্ডিজ সফরের জন্য মুশফিকুর রহিমের পর এবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে মোস্তাফিজের খেলা নিয়েও। নতুন মুখ জাকের আলি অনিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের জায়গায় সুযোগ পেয়েই যিনি দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। ২৭ বলে খেলেন ৩৭ রানের কার্যকরী ইনিংস। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটারের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন সালাউদ্দিন। ২-১ ম্যাচ দেখে কাউকে হিরো কিংবা ভিলেন না বানানোর অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন একটা ছেলে দলে আসে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যেই আসে, সে পারফর্ম করেই আসে। যারা নতুন প্লেয়ার আসে তাদের একটু সময় দেন, আমার মনে হয় তখন তাদের সুবিধা হবে। কারণ অনেক সময় অনেকে মিডিয়া প্রেশার হ্যান্ডেল করতে পারে না।’ সব মিলিয়ে সালাউদ্দিনের কণ্ঠে টাইগারদের ইতিবাচক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রæতিই ফুটে উঠেছে। এদিকে আজ আফগানদের বিপক্ষে সালাউদ্দিনের প্রত্যাশার একরকম পরীক্ষা দিতেই আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নামছে টাইগাররা।