×

সাময়িকী

সেলিম রেজা’র গুচ্ছ কবিতা

Icon

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেলিম রেজা’র গুচ্ছ কবিতা
   

সুদূরের প্রতিমা

দীর্ঘ সময়ের ফাঁক গলে দীর্ঘ বাসনা

জড়ো হলো একাকী কান্নার আঙিনায়

বুকের ভেতর হইচই, ভাঙনের শব্দ

তবু মনের ক্যানভাসে সুদূরের প্রতিমা

হেঁটে যায় আলতো পায়ে গভীর অরণ্যে

বিকেলের স্নিগ্ধরোদ ঘাসের পালকে করে খেলা;

জীবন বাতাসের সুরে হাঁটে আলপথে

স্বপ্নের সাথে চোখাচোখি-কানাকানি

আকাশের বুকে ছুড়ে দেয়া চুমু;

খোলাচুল নগ্নপায়ে বালিকা বালিয়াড়ি সমুদ্রে

দুরবিন চোখ দেয় ডুবসাঁতার নীলরোদ্দুরে

সূর্যস্নানে অবিরাম ডাকে ভিনদেশি কায়া

মৌনতায় হয়না যাওয়া পড়ে থাকে মায়ায়

ধ্যানমগ্ন ঋষি ইচ্ছের দেয়ালে হেলান দিয়ে

নির্বাক নদীতে খুঁজে সৃষ্টির রহস্য

দীর্ঘ আলিঙ্গনে ভাঙে নীরবতা

দূরের কপোতি স্বপ্নের পেয়ালায় বসায় চুমুক

ভাবনা-২৬

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে কাটছে সময়। জবানে ধরেছে পোকা, মানুষ খেয়ে যাচ্ছে ধোঁকা। যাপিত জীবনে সংসারটাই বড় গরমিলের, এই আছি এই নাই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যতই এগোচ্ছে সময় ততই আমরা হিসাবী হয়ে উঠছি। রোজনামচায় বাড়ছে শুধুই হিসাবের ডিজিট। হিসাব কষে স্থাবর-অস্থাবর ব্যক্তিমালিকানায় ভুঁইফোঁড় স্বপ্ন। রাত গভীর হয়, হিসাবের ধরন পাল্টে যায়; সত্যিই তো ইদানীং বিশ্বাসের জায়গাটা ক্ষীণ হয়ে আসছে। জবান জবানের মূল্যায়ন করে না, ভুলে যাওয়ায় হালের ক্রেজ। দিব্যি যাচ্ছি ভুলে, ভুলের মাশুল দিচ্ছে কূলে। হিসাবের কুরুক্ষেত্রটা এমন- এই আমার, এই তোমার; বাকিটাও আমার।

ভাবনা-২৭

কতদিন পেছনে পড়ে থাকা? ঘুরে দাঁড়ালেই তো সবাই পেছনে পড়ে যায়। আমরা কি পারি মোক্ষম সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে! আমরা কি পারি সবকিছু মাড়াতে? আমরা কি পারি স্বনির্ভর হাতটা বাড়াতে? লোকলজ্জার ভয়ে পারলাম আর কই! সাহস সঞ্চয় করাটাও একটা বড় যুদ্ধ, কেউ পারে আবার কেউ কেউ পারে না। ডিপ্রেশনে (বিষণ্নতা) ভুগে অকালপ্রয়াণে হিসেবের খাতায় নাম লিখায় অনেকে। বিষণ্নতা আসতেই পারে যেমন সন্ধ্যার পর রাত আসে; রাত পার করতে পারলেই দিন। এমন তো না যে, নিকষ কালো রাতের পর দিন আসবেই না। দরকার ধৈর্য্যরে আর একটু দৃঢ় মনোবল এবং সাহস। যে যাই বলুক নিজের অবস্থান নিজেকেই নির্মাণ করতে হয়। সস্তায় কিংবা লোভের সাগরে ঝাঁপ না দিয়ে একটু অপেক্ষা করলে ক্ষতি কিসের!

আগুনে পোড়া

একদল পাখি

নগ্ন তলোয়ারের ধারালো পোঁচে রক্তাক্ত বুক

বধির সময়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দ্বিখণ্ডিত সাহস

তুমিই জ্বলন্ত আগুন, তবু পোড়ার ভয় নেই;

দূর ঠেলে কাছেই, অহোরাত্রি সখ্যতায় জড়াই

সময়টাই এমন ভিন্নতায় কড়া নাড়ে

বয়সটাই এমন দিনে দিনে শুধুই বাড়ে

ধার নেয়া আকাশটা রেখে দেবো বুকপকেটে

স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে পাড়ি দেবো মন-মন্দিরে

মায়ার সনদ নিমগ্ন দুপুরে

অযোগ্য ভেবে স্বপ্ন পাঠালে নির্বাসনে

দীর্ঘ সময়ের ফাঁক গলে দীর্ঘ বাসনা

জড়ো হলো একাকী কান্নার আঙিনায়

যে আকাশে আমাকে খোঁজ

সেখানেই আমি, কীভাবে বুঝো!

সুখটানে একটা সিগারেট...

স্বপ্নিল আকাশ আর একদল পাখি

নিদ্রাহীন শালিক

একটি শালিক

অনুতপ্ত আঁধারে

একটি স্বপ্ন

কষ্টের কফিনে মোড়া

একটি মন

উড়ে খোলা আকাশে

একটি সম্পর্ক

টিকে থাকে বিশ্বাসে

একটি পথ

থাকে পথিকের অপেক্ষায়

একটি দুপুর

নিঃসঙ্গ খাঁ খাঁ রোদ্দুর

একটি বিরহ

জ^ালায় তুষের অনল

একটি নদী

নাব্যতা খুঁজে মোহনায়

একটি জীবন

সবুজ প্রজাপতি

একটি সুপ্রশস্ত বুক

সান্ত¡নার আশ্রয়স্থল

মধ্যরাতে নিদ্রাহীন পাখি

একটি শালিক।

মৃত্যুর পয়গাম

ভালোবাসা উড়ে আসে

মিছিলে মিছিলে

উৎসব করে

উপচে পড়া দর্শক-গ্যালারি;

ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থাকে

একজোড়া চোখ

আয়োজন শেষে দেয় উড়াল

মিছিলে মিছিলে মানুষের সমাগম

দীর্ঘ অপেক্ষার পর

আলো নিভে গেলে

বাড়ে ব্যাকুলতা

মৃত্যুর পয়গামে উড়ে ভালোবাসা

অধুনা শিল্পের করাত

স্বপ্নের ভেতর অপেরা হাউস

সঙ্গমযুদ্ধে আগুনে পোড়াপুতুল

মায়া-মমতার সরল স্পর্শে

ব্যথার বারুদে জ্বলে অন্দরমহল

অধুনা শিল্পের করাতে

আহত স্বপ্ন

বিধ্বস্ত শহর

তবু

আশা জাগানিয়া-

স্বপ্ন বুনে;

বুনে শিল্প

শহুরে মীরা বাঈ

বরফকুচি অভিমান ঢালে গেলাসে

জড়ো হয় একেএকে তুমুল তৃষ্ণা

উষ্ণস্রোতে ভাসে চিবুকের তিল

কিসের এত্ত অস্থিরতা!

কেন আগুনের সাথে সখ্যতা!!

লুটতরাজ

বিশ্ব লুটেরা লুটে নিচ্ছে সময়ের কবজ

সবাই চুপ মিথ্যে অজুহাতে দিয়েছে ডুব

কেউ বলছে না কথা শুধু তাকিয়েই আছে

বিশ্ব লুটেরা লুটে নিচ্ছে প্রাগৈতিহাস জনপদ

বিজয় ইতিহাস কালের সাক্ষী ছায়ার আঁচল

কেউ দিচ্ছে না সাড়া শুধু আড়াল খোঁজে

বিশ্ব লুটেরা লুটে নিচ্ছে সোনালি দিনের গল্প

শৃঙ্খলিত জীবন-মান, মানবিক অধিকার

সবাই বলছে কথা কেউ শুনে না কারো

এক হƒদয়বান

মানবিক স্বজন

ষ ৯-এর পাতার পর

আমি ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি এক অপার মুগ্ধতা নিয়ে। কারোরই কোনোদিকে মনোযোগ নেই- ইন্টার্নদের সমস্ত মনোযোগ হারিস ভাইয়ের দিকে এবং হারিস ভাইয়ের পরিপূর্ণ মনোযোগ নবীন শিক্ষার্থীদের দিকে, সেখানে আমি এক অস্তিত্বহীন উপস্থিতি যেন। বাম থেকে ডানে সমবেত ইন্টার্নের প্রেসক্রিপশন, রোগীর তত্ত্ব-তালাশ শেষে তিনি যখন পেছনে ঘুরলেন তখন তার সাদা অ্যাপ্রোন যেন সুফিদের আল্লাখাল্লার খদ্দরের পোশাকের নৃত্যের মতো ডানা ছড়িয়ে দিল। তিনি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুহূর্তে হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে বললেন, ‘তুমি এসেছ, চলো আমরা যাই।’ বলে আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তার গাড়িতে উঠলেন। সাদা অ্যাপ্রোনটা খুলে বললেন, ‘চলো আগে শাহবাগে গিয়ে চা খাই।’ আমরা শাহবাগে গিয়ে চা-নাশতা খেয়ে বীনু আপনার ইস্কাটনের বাসায় গেলাম। বীনু আপার সঙ্গে কথা-বার্তা বলে, গল্প করে তারপর চলে এলাম। সে দফা বীনু আপাকে আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। আমার ধারণা হারিস ভাইয়ের সঙ্গে মিনিটের কথাবার্তায়ই তিনি অনেক সুস্থতা বোধ করেছিলেন।

আমি জানি, দৃঢ়ভাবেই জানি আমার চেয়েও অনেক হƒদয়স্পর্শী ঘটনা আছে হারিস ভাইকে নিয়ে অন্যদের স্মৃতিতে। কেননা তিনি এক মহৎ হƒদয়বান মানুষ, যথার্থ মানুষ।

হারিসুল হকের কবিতায় জীবন অন্বেষা

ষ ৯-এর পাতার পর

নিঃসঙ্গতা, প্রেম-কাতরতা ও ব্যক্তিগত অনুভূতির আলোড়ন উদ্ভাসিত

রাজনীতি মানুষের হিংস্রতা, বন্ধুত্ব হিংসার ছুরি তার দিকে লকলকে জিভ বের করে উদ্যত সঙ্গীন হয়ে ওঠে বার বার। হারিসুল হক আশা ও স্বপ্নলগ্ন। জীবনভাষ্য, সম্ভাবনা, সংগ্রাম আর পথ অতিক্রমণের মাধ্যমে তিনি অচেনা এক কবিতার জ্ঞাত পরিভ্রমণ করে চলেছেন তিনি। জীবন ও মানুষ তার কাছে রহস্যময়;

নড়ে চড়ে বসতেই মনে হলো আমি ঠিক নেই

ঘরের জায়গায় ঘর, চেয়ারের জায়গায় চেয়ার,

কম্পিউটার টেবিলে সিপিউউ, মনিটর, প্রিন্টার

যে যার জায়গায় ঠিক আছে।

শুধু আমি ঠিক নেই।

এ জীবন যেন এক অশুদ্ধ গণিত

ভ্রান্ত সূত্র ধরে কষে যাচ্ছি, ঐকিক নিয়মে

......................................

যাও তুমি বাতাসে বেলুনের মতো

উড়তে থাকো

ভাসতে থাকো

স্পর্শ করে আটঘর বেহেশতের চাবি

যাও তুমি

যেখানে যাবার যাও

(যেখানে যাবার যাও)

মানুষের তৈরি পৃথিবী শ্রেণি বৈষম্য, সম্প্রদায় বিভক্তি, আশরাফ আতরাফ ও উঁচুনীচু স্তর বিন্যাস করেছে। তাইতো এক অন্তর্বেদনা ধারণ করে হারিসুল হক স্পর্শ করে নিজস্ব পৃথিবী। শস্যক্ষেত্র, আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি ও সৌন্দর্য তার কবিতার প্রধান উপজীব্য। শহরকে গ্রাস করছে বহুতল ভবন। মানবিকতা উধাও। হারিসুল হক মানুষের রুচি শিল্প চেতনা, নন্দনতত্ত্বের বিশাল ভুবনে আবদ্ধ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App