×

শেষের পাতা

লাভজনক ফল ‘ড্রাগন’

Icon

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লাভজনক ফল ‘ড্রাগন’
   

হরলাল রায় সাগর : শখের বশে বাগানে ২০০০ সালে ড্রাগন ফল চাষ করেন নাটোর সদর উপজেলার আলাইপুরের সেলিম রেজা। তখন ড্রাগন ফল সম্পর্কে ভালো ধারণা বা চাষ পদ্ধতি জানতেন না। এরপর কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০০৮ সালে চাষের পরিধি বাড়ান। তখনও এটি ছিল নিজের প্রয়োজনে সৌখিনতা। ড্রাগন ফল সম্পর্কে ভালো ধারণা আয়ত্ব করে ৮ বছর পরে ২০১৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু করেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা, আর বিঘায় লাভ হয় দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এরপর আর সেলিমকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি ১৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করছেন।

শুধু নাটোরের সেলিম রেজা নন, সারাদেশে তার মতো হাজার হাজার মানুষ এখন ড্রাগন ফল চাষ করছেন। অল্প পরিশ্রমে লাভ অনেক বেশি। তাই নতুন নতুন চাষি ঝুঁকছেন ড্রাগন ফল চাষে। গত কয়েক বছর ধরে এই বিদেশি ফলটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর এখনই দেশে ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। মাত্র ১০ বছরে দেশে ড্রাগন ফল চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে। এখন ড্রাগন ফলের মৌসুমে বাজার সয়লাব থাকে। দামও নাগালের মধ্যে। পুষ্টিকর এই ফলটি এখন আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় না। দেশে উৎপাদিত ফলেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এখন তা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

ড্রাগন ফলের বর্তমান বাজার প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। অথচ কয়েক বছর আগেও ফলটি তেমন পরিচিত ছিল না। এখন গ্রাম পর্যন্ত জনপ্রিয় ড্রাগন ফল এবং মানুষ অনায়াশেই ফলটির স্বাদ নিচ্ছেন।

সফল ফলচাষি সেলিম রেজা বলেন, ড্রাগন চাষের জন্য উঁচু জায়গা দরকার, যেখানে পানি জমবে না, কিংবা স্যাঁতসেঁতে থাকবে না। বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে ফলন ধরে। এটি খুবই দ্রুত বর্ধনশীল। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর- এই ৫/৬ মাস ফলন পাওয়া যায়। প্রতি মাসে ২-৩ বার ফল তোলা যায়।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে দুইশ খুঁটি লাগে। পরিচর্যা তেমন লাগে না। ড্রাগন গাছের মূল খাবার পানি। শুধু সেচ দিতে হয় পরিমিত। ব্যাস। একবার বিনিয়োগে ২০-২৫ বছর টানা ভালো ফলন পাওয়া যায়। ড্রাগন চাষে কোনো ক্ষতি নেই। প্রতি বিঘা জমিতে ৫-৮ টন ফল পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত লাভজনক, যা কৃষির অন্য কোনো ফসলে নেই বলে মনে করেন সেলিম রেজা। তবে, গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগন ফল উৎপাদনে হরমোন ব্যবহার নিয়ে তিনি আক্ষেপ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মেহেদী মাসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথম দিকে ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী ছিলেন না কৃষকরা। এছাড়া নানা প্রতিবন্ধকতাও ছিল। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে কৃষকরা ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, ড্রাগন ফল উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। তাই এই ফলের চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলসহ সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় দামও নাগালের মধ্যে। রাজধানীসহ সারাদেশেই ড্রাগন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্পের সহায়তায় বিদেশি এই ফলটি কয়েক বছরেই দেশের কৃষিতে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার অবদান রাখছে ড্রাগন ফল। এর চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। সে সময় মাত্র ১৮ হেক্টর জমিতে ৬৬ মেট্রিক টন ফল পাওয়া যায়। এরপর আস্তে আস্তে চাষ বাড়তে থাকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪১ হেক্টর জমিতে ফলন পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২২১ হেক্টর

জমিতে। আর ফলন হয়েছে ৬৮ হাজার ৮১৩ টন। প্রায় সব জেলায় কম বেশি চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি হচ্ছে যশোর অঞ্চলে। এমনকি ঢাকা জেলায়ও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে তিন প্রজাতির ড্রাগন ফল দেখতে পাওয়া যায়। ১. পিটাইয়া বা লাল ড্রাগন ফল : খোসার রঙ লাল ও শাঁস সাদা। ২. কোস্টারিকা : খোসা ও শাঁস উভয়ের রঙই লাল। ৩. হলুদ রঙের ড্রাগন ফল : এই জাতের ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।

বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাতগুলো মূলত কোস্টারিকা ও পিটাইয়া জাত মিলিয়ে তৈরি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রাগন ফলের আলাদা চারটি প্রজাতিও উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো হচ্ছে বারি-১, যা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ও জার্মপ্লাজম সেন্টার মিলিতভাবে তিন প্রজাতির ড্রাগন ফল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে- বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২ এবং বাউ ড্রাগন-৩।

একটি ড্রাগন ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে যে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে তার খোসা লাল। ফলের মধ্যে কালিজিরার মতো ছোট ছোট নরম বীজ আছে। নরম শাঁস ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত এই ফলের স্বাদ হালকা মিষ্টি। এছাড়া, গোলাপী, হলুদ ও বেগুনি রঙের ড্রাগনের চাষও হচ্ছে।

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত। ফলে ফাইবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, প্রচুর ফসফরাস, অ্যাসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।

ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপণের পর ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। বছরে ৫-৬টি পর্যায়ে ফল সংগ্রহ করা যায়।

##

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App