দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকদের চাপ

হরলাল রায় সাগর
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের চাপ বাড়ছে। পর্যটক ভিসায় বাংলাদেশের কাছাকাছি পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তিন মাস ধরে ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় পর্যটনের জন্য এই বিকল্প গন্তব্য বেছে নিয়েছেন তারা। অবশ্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক ভারতের কলকাতা, দার্জিলিং, মুম্বাই, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, সিকিম ও মেঘালয়ে ভ্রমণ করতেন। এ কারণে পর্যটক যেমন কমেছে, তেমনি ভারতকেন্দ্রিক দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর থেকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কার্যক্রম সীমিত করে দেশটি। এমনকি বাংলাদেশিদের জন্য শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসা ভিসা চালু রাখলেও পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। যাদের আগে থেকেই ভিসা আছে তাদের অনেকেও বিমানবন্দরে হয়রানি বা আটকের ভয়ে ভারতমুখী হচ্ছেন না। ফলে দেশটির বিভিন্ন রুটে আকাশপথের যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
সব এয়ারলাইন্স তাদের ভারত রুটের ফ্লাইট সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। ভিসা বন্ধের কারণে এরই মধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ফ্লাইট স্থগিত করেছে নভোএয়ার, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে ভারতের পর্যটকদের সেই চাপ এখন ব্যাংকক ও মালদ্বীপের ফ্লাইটের উপর পড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনকেন্দ্রিক দেশগুলোর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও মালদ্বীপে; শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স ও ফিটস এয়ার কলম্বোয় এবং মালদিভিয়ান, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, বাটিক এয়ার ও এয়ার এশিয়া সংশ্লিষ্ট দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এসব এয়ারলাইন্সে সিঙ্গাপুরের ইকোনমি ক্লাসের রিটার্ন টিকিটসহ ভাড়া প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা, মালয়েশিয়া ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংকক ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা, মালদ্বীপ ৪৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা, কাঠমান্ডু ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ও শ্রীলঙ্কা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
দূরত্বের দিক দিয়ে ভারতের পর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কাছের পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ নেপাল। দেশটিতে বর্তমানে ঢাকা থেকে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে দুটি এয়ারলাইন্স। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং নেপালের হিমালয়া এয়ারলাইন্স।
ট্যুর অপারেটররা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে সারা বছরই ভারতের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় পর্যটক যেত। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ট্যুর প্যাকেজ বিক্রি হতো কাশ্মির এবং শিমলা-মানালির। কিন্তু এ বছর ভিসা বন্ধের কারণে প্যাকেজ বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায়। যাদের আগে থেকে ভিসা নেয়া ছিল, তারা বিচ্ছিন্নভাবে ভারত যাচ্ছেন। যারা নিয়মিত পর্যটনের জন্য দেশের বাইরে যেতেন তারা বিকল্প দেশে যাচ্ছেন। ভারতে ভ্রমণে যেতে না পারায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার রুটে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতের তেমন পর্যটক নেই। তবে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কাঠমান্ডুতে বিমানের ফ্লাইটে যাত্রীদের বেশ চাপ বেড়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) এর মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোয় পর্যটকদের চাপ বেড়েছে, যা বিগত বছরগুলোর এই সময়ের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি ভ্রমণ খরচও যুক্তিসঙ্গত। তিনি জানান, ভ্রমণের অবস্থানসহ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে প্যাকেজ প্রাইস। তবে এখন শ্রীলঙ্কায় ৭০-৮০ হাজার টাকা, নেপালে ৪০-৫০ হাজার এবং থাইল্যান্ডে ৫০-৫৫ হাজার টাকার মধ্যে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা।
বাইরের দেশে পর্যটকদের চাপ বাড়লেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনের ক্ষেত্রে এখন দুর্যোগপূর্ণ সময় যাচ্ছে। দেশের বাইরে যে পর্যটক যায়, তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক যায় ভারতে। কিন্তু দেশটিতে পর্যটক ভিসা বন্ধ। থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে কমপক্ষে ৪৫ দিন লাগে। মালয়েশিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া জটিল করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় পর্যটক ভিসা প্রায় বন্ধ। শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে ধাপে ধাপে বিমান ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরের অনেক পর্যটন কেন্দ্রে বিধিনিষেধ আছে। এসব কারণে পর্যটকরা উৎসাহ পাচ্ছে না।
টোয়াবের পরিচালক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ইউনুছ বলেন, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে টুরিস্টদের যাতায়াত বেড়েছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের (একসঙ্গে ৩ দেশ) প্যাকেজও নিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া সহজ ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পর্যটক নেপালেও যাচ্ছেন।