×

শেষের পাতা

পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা

Icon

হরলাল রায় সাগর

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা
   

দেশের পর্যটন খাতে ধস নেমেছে। ভ্রমণে পড়েছে ভাটার টান। বিনোদন কেন্দ্রগুলো ফাঁকা। নেই ভ্রমণপিপাসুদের কোলাহল। এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে ভাঁজ। পর্যটন খাত ঘিরে অন্তত ১৬ ধরনের সেবা দানকারীরা পড়েছেন হুমকির মুখে। শুধু ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ১০ দিনে দৃশ্যত এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছিলেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে দেশের চরম অস্থির অবস্থার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন খাতের সেবাদানকারীরা। এই ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। খাতের ব্যবসায়ী ও সেবাদানকারীরা বলছেন, ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন শান্ত পরিবেশ। সেই শান্ত পরিবেশের অপেক্ষায় ব্যবসায়ী ও ভ্রমণবিলাসীরা।

চলতি বছরের শুরু থেকেই একের পর এক ধকল যাচ্ছে পর্যটন শিল্পে। জাতীয় নির্বাচনের উত্তপ্ত পরিবেশ, কয়েক দফায় বন্যা ও দীর্ঘমেয়াদে তাপপ্রবাহের কারণে পর্যটনে ভাটা পড়ে। দুই ঈদসহ উৎসবের সময়েও দুর্যোগের কারণে ঘুরতে বের হননি ভ্রমণবিলাসীরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই আবার খরার মুখে পড়েছে পর্যটন খাত।

পরে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে দেশে সহিংসতা শুরু হয়। ১৭ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ডাটা সেন্টার আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার পর থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ জুলাই মধ্যরাতে দেশে জারি করা হয় কারফিউ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ভ্রমণপিপাসুদের যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এমনকি বিদেশে ভ্রমণ করা পর্যটকরাও অনিরাপদ মনে করেন। এতদিন ইন্টারনেট না থাকায় বিমানের টিকেট কাটা সম্ভব হয়নি। ২৮ জুলাই বিকালে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার তুমুল বিক্ষোভে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। বন্ধ থাকে যানবাহন চলাচল।

এই পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। চরম সংকটে পড়ে দেশ। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার ভোর থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ মাঠে না থাকায় এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী চলছে লুটতরাজ, খুন, হামলা ও অগ্নিসংযোগ। ক্ষমতার পালাবদলে পরিস্থিতি খুবই টালমাটাল। প্রায় অনিরাপদ গোটা দেশ। এই পরিস্থিতে উদীয়মান পর্যটন শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এখন পর্যটক শূন্য। একই অবস্থা সূর্যোদয়াস্তের দৃশ্য উপভোগের সাগরকন্যা কুয়াকাটার। এছাড়া জাফলং, রাতারগুল, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের পাহাড়ি মনোরম লোকেশনসহ দেশের সব পর্যটন এলাকা খাঁ খাঁ করছে। আবাসিক হোটেল ফাঁকা। বিকিকিনিতে একেবারেই খরা রেস্তোরাঁ, শামুক, ঝিনুক, আচারসহ বাহারি পণ্যের দোকানগুলো। পর্যটন স্পট, হোটেল-মোটেলগুলো খালি পড়ে আছে, ট্যুরিস্ট বোটগুলো বাঁধা পড়ে আছে ঘাটে। কোনো কোলাহল নেই, নেই ব্যস্ততা। চারিদিকে নীরবতা। সৈকত বা ভ্রমণের স্থানে ফটোগ্রাফার, বিচবাইক, ওয়াটার বাইক চালক ও ঘোড়ার সহিসদের উত্তেজনা নেই। বেঞ্চ, ওয়াটার বাইক, বোটগুলো তীরে তুলে রেখে দিনভর অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংকটে অর্থকষ্টে তাদের দিন কাটাছে। এই পর্যটন খাত ঘিরে অন্তত ১৬ ধরনের সেবা দানকারীরা হুমকির মুখে পড়েছেন। এমন অচলাবস্থা বহাল থাকলে বাড়বে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ। বাড়বে খাত সংশ্লিষ্টদের কষ্ট।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) জানায়, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পথের বিমানের টিকেট ও ট্যুর প্যাকেজ করতে না পারায় প্রতিদিন অন্তত একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পর্যটন খাতে। এ হিসাবে ইন্টারনেট বন্ধের ১০ দিনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন দেশি-বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। যেসব ট্রাভেল এজেন্সি ট্যুর প্যাকেজ সাজাতো, তা এখন নেই। থাইল্যান্ডে গড়ে বিমানের আসা-যাওয়ার ভাড়া ৪০ হাজার টাকা থেকে কমে ২৬ হাজার টাকায় নেমেছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও একই অবস্থা। দুবাইয়ে বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসাসহ কোনো ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ হওয়ার কারণে ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। আর অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ ভেদে ১১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার আসা-যাওয়ার ভাড়া এখন ৮ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায় নেমেছে। তারপরেও যাত্রী বা পর্যটক মিলছে না।

আটাব জানায়, দেশে বছরে পর্যটন শিল্পের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। এর অন্তত ২০ শতাংশ চলে গেছে বিদেশি এজেন্সির কাছে। ইন্টারনেট সেবা না থাকা বা এর গতি কম থাকায় ভ্রমণপ্রত্যাশীরা বাইরের কোনো দেশের এজেন্সির মাধ্যমে ঢাকা থেকে গন্তব্যের টিকেট কাটে। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে ওই সব এজেন্সির বাংলাদেশের এজেন্ট ও দেশীয় কিছু দালাল। আর এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশীয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। এদিকে সড়ক পথেও দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারেই কম। কিন্তু কোনো পর্যটক নেই।

আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ভোরের কাগজকে বলেন, শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আপাতদৃষ্টিতে পর্যটন খাতে ১০ দিনে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পর্যটন শিল্পের অংশীজন এবং এর সঙ্গে জড়িতদের ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। ভ্রমণকারীদের আস্থা ও ভ্রমণ করার মতো অবস্থা তৈরি হতে আরো অন্তত ছয় মাস লাগবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি ও এফবিসিসিআইর ট্যুর, ট্রাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. রাফেউজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, অনুকূল পরিবেশে পর্যটন সংগঠিত হয়। পর্যটন কখনো প্রতিকূল পরিবেশ, উত্তপ্ত পরিবেশ, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতায় সংগঠিত হয় না। পর্যটন হলো শান্ত মেজাজের শিল্প। যে কোনো একটা প্রেক্ষাপটে পর্যটনের মোড় ঘুরে যায়। বাংলাদেশের পর্যটনকে টিকিয়ে রাখতে হলে পরিবেশ শান্ত থাকতে হবে। সেটা দেশি কিংবা বিদেশি পর্যটক হোক। কোনো পর্যটক পয়সা খরচ করে অশান্ত পরিবেশে আসে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App