রেকর্ড গড়েই চলেছেন জ্যোতি

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার নিগার সুলতানা জ্যোতি। অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও একের পর রেকর্ড গড়েই চলেছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে দুর্দান্ত বছর কাটানোর পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম টাইগ্রেস হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে আবারো ১৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। আসন্ন বিশ্বকাপে ভালো করার স্বপ্ন দেখা টাইগ্রেসদের সাফল্য নিঃসন্দেহে নির্ভর করবে অনেকটা ২৭ বছর বয়সি জ্যোতির ওপরই।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পদার্পণ করা ম্যাচেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন টাইগ্রেস জাতীয় দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। মেয়েদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার কীর্তি গড়েছেন নিগার সুলতানা। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে বিসিএলে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক নিগার। মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক জ্যোতি জান্নাতুল ফেরদৌসের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ২১৫ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন। তিনে নামা নিগার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ২৫৩ বলে ২০ চার ও ২ ছক্কায় দেড়শ রানের ইনিংস খেলে। মেয়েদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিগার যে ইতিহাস গড়েছেন, বাংলাদেশের ছেলেদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেই কীর্তিটা আল শাহরিয়ার রোকনের। জাতীয় দলের সাবেক এই ওপেনার ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে তখনো বাংলাদেশ দল টেস্ট মর্যাদা পায়নি। ম্যাচ শেষে জ্যোতি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে বড় একটা মাইলফলকের তৌফিক আমাকে দিয়েছেন। প্রথমবার তিন দিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা, আমি আমার প্রক্রিয়ায় ছিলাম। সেটা বাস্তবায়ন করতে পেরে খুব খুশি।’ শুধু প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করে থামেননি জ্যোতি। প্রথম ম্যাচে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ১৭১ রান। মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেট লিগে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটার। মধ্যাঞ্চলের হয়ে পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যারাথন ইনিংস খেলেছেন। ড্র হওয়া ম্যাচটিতে টানা দ্বিতীয় রাউন্ডে শতকের দেখা পাওয়া একমাত্র নারী বাংলাদেশি ব্যাটার করেছেন ৩২২ বলে ১৮ চারে ১৭১ রান। বিসিএলের শুধু জ্যোতির ব্যাটেই রানবন্যা দেখা দিয়েছে এমনটা নয়। স্বাভাবিকভাবে নারীদের টেস্ট ক্রিকেটের পথ অগ্রসর হয়েছে। যদিও আইসিসি টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দল কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেনি। অবশ্য নারীদের ক্রিকেটে এই সংস্করণের খেলা খুব বেশি দেখা যায় না। বছরে হাতেগোনা কয়েকটি ম্যাচ মাঠে গড়ায়। সেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া এই টুর্নামেন্ট দিয়ে টেস্টের দরজা খোলার কাজটিই হচ্ছে। শুরু থেকেই প্রত্যাশা ছিল জ¦লে উঠবেন ক্রিকেটাররা। সাদা পোশাকে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার এর থেকে বড় সুযোগ আর হতে পারে না। নারীরা সেই প্রত্যাশার থেকেও বেশি প্রতিদান দিচ্ছেন। টুর্নামেন্টে একের পর এক সেঞ্চুরির দেখা মিলছে।
এর আগে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেন জ্যোতি। বাংলাদেশ প্রায় এক দশকের জয়খরা কাটিয়েছে প্রথম ম্যাচেই। টুর্নামেন্টজুড়ে দলীয় ব্যর্থতার মাঝেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে ঝলক দেখিয়েছেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। জ্যোতি আছেন বলেই বড় দলগুলোর বিপক্ষে মাথা উঁচু করে লড়েছে টাইগ্রেসরা। টুর্নামেন্টের ব্যাটিং কিংবা উইকেটের পেছনে কিপিংয়ের দুর্দান্ত নিগার সুলতানা জ্যোতি স্বীকৃতিও পেয়ে গিয়েছেন তার। জায়গা করে নিয়েছেন সেরা একাদশে। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা একাদশ দিয়েছে আইসিসি, যেখানে সাতটি দেশের খেলোয়াড় আছেন। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এই তালিকায় নিগার। উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পেয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৯ ও অপরাজিত ৩২ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলেন নিগার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান আউট না হলে হয়তো আরো একটি দারুণ ইনিংস খেলতে পারতেন তিনি, ইংলিশদের হারাতে পারলে তো কথাই নেই। চার ইনিংসে ৩৪.৬৬ গড়ে ১০৪ রান করেছেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। বিশ্বকাপে সেরা অবদান রেখেছেন তিনি কিপিংয়ে। গøাভস হাতে ছয় স্টাম্পিং ও একটি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। টুর্নামেন্টে উইকেটকিপার হিসেবে সর্বোচ্চ সাত ডিসমিসাল নিগারের। নারী বিশ্বকাপের বাইরেও বছরজুড়ে জ্যোতি ছিলেন দুর্দান্ত।
টাইগ্রেস অধিনায়ক জ্যোতি সম্প্রতি র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছেন ১১ ধাপ। ওয়ানডেতে এই ডানহাতি ব্যাটারের র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান অবস্থান ২৮তম। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি মাইলফলকের সামনে রয়েছেন জ্যোতি। আর মাত্র ১৭ রান করলেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। টি-টোয়েন্টির ৩৯ নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে থাকা এই ব্যাটার ২৪.৫ গড়ে ৯৮৩ রান করেছেন। আসন্ন বিশ্বকাপে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে টাইগ্রেসরা। ২০২৪ সালের ফর্ম ধরে রেখে জ্যোতি বিশ্বমঞ্চে গৌরব বয়ে আনবেন, এমনটা প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের।
য় রাফিদ বিন ইসলাম