×

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার : ড. মুস্তফা কে মুজেরী

অর্থনীতিতে মঙ্গলের চেয়ে সমস্যাই বেশি সৃষ্টি করবে

Icon

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতিতে মঙ্গলের চেয়ে সমস্যাই বেশি সৃষ্টি করবে
   

মরিয়ম সেঁজুতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উচ্চহারে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হলে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। যেহেতু দেশে উৎপাদন কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্থবির, মানুষের আয় কমে গেছে, নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না, প্রবৃদ্ধিও খুবই স্বল্প- সবকিছু মিলে ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো- অর্থনীতিতে মঙ্গলের চেয়ে সমস্যাই বেশি সৃষ্টি করবে। জনজীবনে খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং ভ্যাটের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হবে- তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া অর্থ পাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন

ভোরের কাগজ : সমসাময়িক বিষয় নিয়েই শুরু করি। নতুন করে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। তবে সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মুস্তফা কে মুজেরী : আপনাকে ধন্যবাদ। বর্তমানে অর্থনীতির অবস্থা অনেকটাই স্থবির। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। ম্যানুফ্যাকচারিংসহ অন্যান্য খাতে আশাব্যঞ্জক কিছু নেই। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সরকার মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমিয়ে আনবে- এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলে অর্থনীতির অবস্থা যখন সঙ্গীন, তখন আইএমএফের ঋণ দেয়ার একটি বড় শর্ত পূরণে সরকার ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়িয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আদায়ের লক্ষ্যে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি মনে করি, উচ্চহারে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হলে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে জনজীবনের খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ভ্যাটের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

ভ্যাট এবং রাজস্ব আদায় শুধু রাজস্ব বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় না। আমাদের দেশে যে কর আদায়ে যে ফাঁকফোকর রয়ে গেছে, সেগুলো বন্ধ না করে দুর্নীতি দমন করতে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কর আদায় ব্যবস্থার মধ্যে শৃঙ্খলা না এনে শুধু করহার বাড়িয়ে কতটা রাজস্ব আদায় করতে পারব- সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে- এটা মূল্যস্ফীতির ওপর আরো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। যতই বলা হোক না কেন- যেসব পণ্যে ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানো হয়েছে তা সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নয়; বাজারে দ্রব্যের দাম বাড়লে তা অন্য দ্রব্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। যেহেতু উৎপাদন কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্থবির, মানুষের আয় কমে গেছে, নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না, প্রবৃদ্ধিও খুবই স্বল্প- সবকিছু মিলে ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো- অর্থনীতিতে মঙ্গলের চেয়ে সমস্যাই আরো বেশি সৃষ্টি করবে।

ভোরের কাগজ : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সংস্কার করতে যে পথে হাঁটছে- সেখানে আরো কিছু করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন? তারা কি ঠিক পথে চিন্তাভাবনা করছেন?

মুস্তফা কে মুজেরী : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পাঁচ মাস হয়ে গেছে। কিন্তু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া। আমরা নীতিমালার কথা বলছি, কিন্তু সমস্যাটা বাস্তবায়নে কি করছি? স্বাধীনতার পর আমরা যখন উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলাম, তখন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কম ছিল। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের গুণমানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো যদি আমরা শক্তিশালী না করতে পারি, তাহলে আমরা এগোতে পারব না। ভালো কাজ করছে, এমন প্রতিষ্ঠান আমরা পাচ্ছি না। এখানেই আমাদের বড় দুর্বলতা রয়ে গেছে। আমি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলছি। তবে এগুলোকে পারফর্ম করতে হলে একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পারফর্ম করতে হবে। কারণ, একটা থেকে আরেকটা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না।

অর্থনৈতিক সংস্কার কিন্তু ওয়ানস্টপ ব্যাপার নয়। এতে সময় লাগবে। তবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্টেক হোল্ডারদের পার্টিসিপেশন থাকতে হবে। ফলে এটা দীর্ঘকালীন হিসেবে ধরে করতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়া বর্তমান সরকার সামগ্রিকভাবে চালু করতে পারছে- তা কিন্তু না। আর পাঁচ মাস যথেষ্ট সময় নয়। বিভিন্ন কমিশন বা টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সরকার যে একেবারে বসে আছে, তা নয়। আমাদের মূল সমস্যার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট। এগুলো সমাধানের জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে

তা কতখানি সঠিক সেটাও যাচাই করে দেখা উচিত।

আমার মতে, পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে- তাকে বলা যায় হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ক্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা বাজারে যাচ্ছে; তারা যদি দেখছে- মুনাফা বেশি করছে তাহলে জরিমানা করছে। তাদের কর্মকাণ্ড এ কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান করতে হলে কী কারণে এটা হচ্ছে- সেই কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। যে পণ্যের দাম বাড়ছে সেগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে আমি মনে করি। বাজার ব্যবস্থায় দাম নির্ধারণ হয় চাহিদা এবং সরবরাহের ভিত্তিতে। কিছু পণ্যের দাম যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, এটা হচ্ছে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। দৃষ্টি দিতে হবে বাজার ব্যবস্থার সমস্যাগুলো কোথায় আছে এবং সে সমস্যাগুলো দূর করার দিকে। আমরা সিন্ডিকেটের কথা বলি, কিন্তু সিন্ডিকেট হচ্ছে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলাতার ফলাফল। আমাদের ফলাফলকে আক্রমণ না করে আক্রমণ করা উচিত কারণটাকে। কি কারণে এই সিন্ডিকেট হলো?

সিন্ডিকেটবাজদের চিহ্নিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটার মানে, মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। বাজারে হয়তো জরিমানা করা হলো- কিন্তু তারা আবার ওই টাকা ভোক্তার কাছ থেকেই তুলে নিচ্ছে। কাজেই সুষ্ঠু সমাধান করতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় যে দুর্বলতাগুলো আছে, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে পণ্য আসে। মূল্যশৃঙ্খলে একাধিক ব্যক্তি থাকে। এই কাজগুলো যারা করে তাদের একটা ভূমিকা আছে। এখানে যদি কেউ দুর্বল হয় আর কেউ সবল হয়, তাহলে সবলরা সুযোগটা নিবে। ৭ থেকে ৮টি পণ্যের বাজার উঠানামা করে। এই পণ্যগুলোর দুর্বল জায়গাগুলো যদি আমরা খুঁজে বের করতে পারি। তাহলে সমাধান করা সম্ভব।

ভোরের কাগজ : ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলোর মাধ্যমে কোনো সমাধান আসবে কিনা?

মুস্তফা কে মুজেরী : একসময় আমাদের দেশে রেশন ছিল। ৯০ এর দশকে এগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়। রেশনে ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, গম, চিনি, তেল এগুলো দেয়া হতো এবং ন্যায্যমূল্যের দোকানও ছিল। কিন্তু এগুলো ৯০ এর দশকে উঠিয়ে দেয়ার বড় কারণ ছিল- এগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এগুলোতে সুফলের চেয়ে কুফল বেশি হয়ে গিয়েছিল। যার কারণে সরকার উঠিয়ে দিয়েছিল। ফলে ন্যায্যমূল্যের দোকান টেকসই সমাধান নয়, তবে সাময়িক উপসম হতে পারে। তবে এটা বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জপূর্ণ করতে হলে বাজার ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী করতে হবে। এমন একটা বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেটা নৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে লাভবান হবে। এটা একদিনে হবে না। যে সংস্কারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে- তা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে হবে। একটা দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে।

ভোরের কাগজ : সংস্কার কতটুকু সঠিক লাইনে আছে? বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে, আপনি কি মনে করেন- এ পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতিতেও সংকট শুরু হতে পারে? ব্যাংকিং খাতের সংস্কার সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করেন?

মুস্তফা কে মুজেরী : ব্যাংকিং খাত আজকে যে অবস্থায় এসেছে- এটা একদিনে হয়নি। আমাদের গোটা ব্যাংক ব্যবস্থা রুগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে এবং অনেকগুলো ব্যাংক আছে- যেগুলো একেবারে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে গেছে। আবার কিছু আছে একটু ভালো। ব্যাংকিং ব্যবস্থার আজকের যে পরিণতি- এটা আমরা সবাই জানি কী কারণে হয়েছে। ৯০ এর দশকে যখন বেসরকারি ব্যাংক এলো; তখন কিন্তু এগুলোর অবস্থা ভালো ছিল। সে সময় চিন্তা ছিল সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে। ক্রমান্বয়ে ভালো ভালো ব্যাংকগুলো খারাপ হয়ে গেল। এর কারণ এসব ব্যাংক থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ চলে গেল। ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলো রুগ্ন হয়ে গেল। বেসরকারি অধিকাংশ ব্যাংকই সমস্যার মধ্যে পড়েছে।

বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- যারা টিকে থাকতে পারবে তারা টিকে থাকবে; না হলে চলে যাবে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে টাকা দিয়ে এ ব্যাংকগুলো বাঁচিয়ে রাখার যে প্রচেষ্টা- এর কারণ হলো তারা গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে তাদের অর্থ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। এইভাবে অর্থসহায়তা দিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে আদৌ ডায়নামিক ব্যাংকে পরিণত করা যাবে কিনা- সেটা বলা যাচ্ছে না।

ভোরের কাগজ : বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে এখন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরেই কোটি কোটি ডলার পাচার হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্বর্তী সরকার যে পথে হাঁটছে তাতে সফলতা আসবে বলে কী মনে করেন আপনি? অভিযোগ আছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে, খেলাপি ঋণও প্রচুর। অর্থ যারা পাচার করছে, তাদের শাস্তি হয়েছে, এমন উদাহরণ বিরল। গণমাধ্যমে তাদের অনেকের নাম এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কি খুব কঠিন?

মুস্তফা কে মুজেরী : প্রচুর অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। আনুমানিক একটা হিসাবও পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও বলেছেন। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ অর্থ যে পাচার হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আশাবাদী পাচার হওয়া ফেরত আনতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা কি? আমাদের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগ অর্থই ফেরত আনতে পারিনি। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়- টাকা যে একবার বাইরে চলে গেছে, আমরা জানি কোন কোন দেশে গেছে, কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে। বেশির ভাগ বিনিয়োগ হয়েছে আবাসন খাতে; সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। কারা নিয়ে গেছে তাও জানা। টাকা আনার জন্য আন্তর্জাতিক আইনও আছে। কিন্তু মূল কথাটা হচ্ছে- এ প্রক্রিয়া ফলো করে আমরা কতদিনে টাকা ফেরত পাবো, এটা সঠিকভাবে বলা খুব দুষ্কর। সময় সাপেক্ষ। এটা শুধু আমাদের দেশের আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করবে না, যেখানে গেছে তাদেরও আন্তরিকতার প্রয়োজন আছে।

আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা একটা সমস্যা। অর্থনীতির যে আকার তাতে ব্যাংকের সংখ্যা অত্যাধিক হয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে সমস্যার সম্মুখিন হয়। ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের চাহিদা বাড়ছে। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে তদারকিটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার যদি সিস্টেম কাজ করা শুরু করে তাহলে পরে সেটা অটোমেটিক শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে ওই শৃঙ্খলাবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিচালিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু পারেনি। তার একটা কারণ হতে পারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল। এখন যদি সঠিকভাবে পরিচালিত করতে চাই তাহলে শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না। এজন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে।

ভোরের কাগজ : বলা হচ্ছে, মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এদিকে, সরকারকে প্রচুর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মুস্তফা কে মুজেরী : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তাতে যে সুফল বয়ে আনার কথা ছিল- তা হয়নি। অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণের যে পরিমাণ তা যদি সূচক দিয়ে দেখা হয়, তাহলে এ ঋণ যে খুব বেশি তা কিন্তু নয়। বৈদেশিক ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে পরিশোধ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। কিন্তু যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই অপব্যায় করা হয়েছে। সঠিকভাবে ব্যবহার হয়নি।

কিন্তু ধার নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ যে ঋণ নিয়েছে- তা দ্বিপক্ষীয়। দ্বিপক্ষীয় ঋণের সুদের হার বেশি, পরিশোধের সময়সীমা কম। আগামী ৫ বছরে যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে তার সুদ দ্রুত গতিতে বাড়বে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমাদের বেশি বেশি মুদ্রা অর্জন করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির আয়ের দুটি খাত- একটি রপ্তানি, অন্যটি রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স ভালো আসছে। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য পণ্য এবং বাজার বহুমুখীকরণ করতে হবে।

পোশাক খাতকে যেভাবে সহায়তা দিয়ে এ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, অন্য খাতগুলো কিন্তু সেভাবে সহায়তা দেয়া হয়নি। ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ হচ্ছে না। অথচ অন্যান্য খাতেও প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এজন্য নজর রাখতে হবে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি এবং নতুন নতুন পণ্য তৈরি করা। আমাদের দেশে বড় সম্ভাবনাময় খাত এসএমই। এসএমই খাত নিয়ে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

ভোরের কাগজ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

মুস্তফা কে মুজেরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App