×

প্রথম পাতা

গ্যাস সংকট

চুলা নিভু নিভু, শিল্পে শঙ্কা

Icon

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চুলা নিভু নিভু, শিল্পে শঙ্কা
   

দেব দুলাল মিত্র : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। লাইনে গ্যাস থাকে না। শিল্পে উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। মাঝরাতে ঘুমের পরিবর্তে চলে রান্না-খাওয়া। সকালে নাস্তার জন্য রেস্টুরেন্টই এখন অনেকের ভরসা। দুপুরের খাবার আগের রাতেই রান্না করে রাখতে হয়। রাজধানীর মধ্যাঞ্চল বাদে বাকি প্রায় সব এলাকাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। তারপরও গ্যাস সমস্যার সমাধানে সুখবর দিতে পারছে না জ¦ালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও তিতাস।

এদিকে একদিকে গ্যাস সংকট ও অন্যদিকে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিগত সরকার শিল্প খাতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের কথা বলে এক দফায় গ্যাসের দাম বাড়ায়, কিন্তু গ্যাস সরবরাহ করতে পারেনি। বর্তমান সরকারও দাম বাড়ানোর কথা বলছে, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। এ অবস্থায় ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। মূলত, এ কারণেই গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখানে যদি ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যেত তাহলেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। সহজেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী কয়েক মাসে সুখবর আসবে, এমন নিশ্চয়তাও খোদ জ¦ালানি উপদেষ্টা বা জ¦ালানি সচিব দিতে পারছেন না।

শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে যায়। কিন্তু শিল্প, আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ে। তারপরও এখন সব খাতেই গ্যাস সংকট চলছে। রাজধানীর অনেক স্থানেই কম-বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, পুরান ঢাকা, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার এলাকায় গ্যাস সংকটের পাশাপাশি লোডশেডিং জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

গ্যাস সংকটে রাজধানী ও আশপাশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী অঞ্চলের কারখানাগুলোর ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। গ্যাস নির্ভর গার্মেন্টস, সিরামিক, ইস্পাত ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। রাজধানীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কোনো কোনো ফিলিং স্টেশন বন্ধও থাকে।

এখনো দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়েই চাহিদার ৭৫ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ২৫ শতাংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে পূরণ করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও সংকট চলছে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন গড়ে

২৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এর মধ্যে আমদানি এলএনজি থেকে পাওয়া যায় গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

তিতাস গ্যাসের এমডি শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, আমরা পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কম সরবরাহ পাই। এটাই সরবরাহ করি। চাহিদা বেশি থাকলেও আমাদের তা দেয়ার সক্ষমতা নেই। প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক আমাদের কাছে ফোন করে। কিন্তু আপাতত কোনো সমাধান দেয়া সম্ভব না।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, গ্যাস সমস্যা সমাধানে আমরা এলএনজি আমদানি অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছি। অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ১৫০টি গ্যাসকূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে না পারলে গ্যাস সংকটের কোনো সমাধান মিলবে না। আগামী দিনগুলোয় গ্যাসের সংকট আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তবে এই সুবিধা পেতে সময় লাগবে। ফলে আপাতত গ্যাস সংকট সমাধানের কোনো উপায় নেই। নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে না পারলে ভবিষ্যতেও এই সংকট উত্তোরণের উপায় দেখছি না। বিগত সরকারের আমদানিনির্ভর নীতির কারণে এই খাত বিপাকে পড়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও আমরা পরবর্তী বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন দেখিনি।

ভূতত্ত্ববিদ ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতা থেকেই দেশে এখন গ্যাস খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই ৫৩ বছরে দেশের কোনো সরকারই নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি পুরনো ও পরিত্যক্ত গ্যাসকূপগুলোও ওপর মনোযোগ দেয়নি। পরিত্যক্ত গ্যাসকূপেও অনেক বছর পর গ্যাস পাওয়া যায়। এলএনজির ওপর নির্ভর করে দেশের গ্যাস সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

গত কয়েকদিনে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গোপীবাগ, কল্যাণপুর, গ্রিনরোড, মাতুয়াইল, খিলগাঁওসহ অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে তীব্র গ্যাস সংকটে জনজীবন ওলটপালট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। লাইনের গ্যাস না পেয়ে অনেকে ইনডাকশন চুলা, ইলেক্ট্রিক কুকার ও এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হয়েছেন। মধ্যম ও স্বল্প আয়ের বাসিন্দারা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। অর্থ সংকটের কারণে রাত ও দিন এক করে তাদের লাইনের গ্যাসের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। গভীর রাতে বা কখনো শেষ রাতে অল্প সময়ের জন্য সামান্য গ্যাস মিলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App