বিএনপির বৈঠক: দশটি বিভাগীয় সমাবেশ করার পরিকল্পনা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো করতে দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড মনে করে সমাবেশের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা সম্ভব হবে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নেতাকর্মীরা আরো সতর্ক হবেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। আজ বুধবার বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে সমাবেশের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হতে পারে। সূত্রের দাবি- গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়াও, আগামী ১৬ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিগুলোতে বড় জমায়েতের টার্গেট নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য, নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়া নীতিমালার বিষয়েও আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে কমিটির সদস্যরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বিএনপি নেতারা জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় কমিটির এক সদস্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টার নিয়োগে কোনো ত্রুটি থাকলে শুধু এ কারণে তাদের কোনো কাজ অবৈধ হবে না। এ সম্পর্কে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না। এমনকি মামলা করা যাবে না। এ বিষয়টি উত্থাপন করলে সদস্যরা তাদের মতামত দেন। কেউ কেউ মনে করেন, সরকার তাদের রক্ষা করার জন্য এমন বিধান রাখবে তা অনুমেয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কতজন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে না বলায় বিষয়টি নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে ক্রমাগত চাপ তৈরি করতে পরামর্শ দেন কয়েকজন নেতা। অন্যরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করলে কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সবার আলোচনার পর ১০ বিভাগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, কিছুদিন পরপর উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো- অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চায়। অর্থাৎ একটি সরকার বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকলে যে ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারও তাই করছে বলে তাদের কাছে মনে হচ্ছে। ফলে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি বাড়াবে।
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে; তবে চূড়ান্ত হয়নি।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয়- অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে মাঠে নামবে তারা। সেই মোতাবেক আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির শোভাযাত্রার মূল্যায়ন করেন নেতারা। তারা বলেন, ঢাকার র্যালিতে বড় ধরনের জমায়েত হয়েছে। কয়েক লাখ লোকের অংশগ্রহণে এই র্যালির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং, বিএনপিকে বাইরে রেখে কিংবা এড়িয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। তাছাড়া বিএনপি এই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সহযোগী এবং সহায়ক শক্তি। তাই, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সমপ্রতি তিনজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, দুইজন উপদেষ্টার বিষয়ে সব মহল থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও প্রশ্ন তুলেছে। বিক্ষোভও হয়েছে। বিএনপি মনে করেন, দুইজন উপদেষ্টার নিয়োগ হতাশাজনক। যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও চিন্তাভাবনা করে এদের নিয়োগ দিলে এই বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। তাই সরকারের উচিত যথাসম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া। বিতর্কিত কাউকে সরকারে না রাখা এবং ভালোভাবে খোঁজখবর করে দায়িত্বে নিয়ে আসা।
এর আগে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রশাসনে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এছাড়া, আরো একজন উপদেষ্টা বিষয়েও বিএনপির এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব আছে।
বৈঠকে দলের কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়ছে। জামায়াত নেতাদের কিছু বক্তব্যে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ‘অসন্তুষ্টি’ রয়েছে। তারপরও সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে যে জাতীয় ঐক্য দরকার, সেই প্রশ্নে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো উচিত নয় বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে।