প্রকৃতিতে শীতের আভাস
ঋতু বদলে ঘরে ঘরে জ্বর আর সর্দি-কাশি

সেবিকা দেবনাথ
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
গরমের প্রভাব শহরে আগেভাগে টের পাওয়া গেলেও শীতের আমেজ বোঝা যায় কিছুটা পরে। প্রকৃতিতে শরৎ বিদায় নিয়ে এসেছে হেমন্ত। হাল্কা শীতের আমেজ পড়তে শুরু করেছে। সকালের দিকে গরম থাকলেও রাতের শেষে ঠাণ্ডা লাগছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় যখন-তখন হচ্ছে বৃষ্টি। মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়টায় জ্বর ও সর্দি-কাশিতে কাবু হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। হাসপাতাল থেকে শুরু করে চিকিৎসকের চেম্বার- সর্বত্রই জ্বর ও সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন রোগীরা।
এদিকে ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ভয়। এক-দুদিনের বেশি জ্বর না থাকলেও গলায় খুসখুসে ভাব, শুকনো কাশি, শরীর ব্যাথা থেকে যাচ্ছে বেশ কিছু দিন। স্ত্রী, দুই সন্তান ও বয়স্ক মাকে নিয়ে ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা থাকেন বেইলি রোডে। তিনি জানান, তার বাসা এখন ছোটখাটো একটা হাসপাতাল। সবার জ্ব-সর্দি-কাশি। দুর্গাপূজার পরপর ছেলে অভিরূপ (১২) জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর মা অনুরাধা (৬৭) এবং ধারাবাহিকভাবে স্ত্রী সুপ্রিয়া (৩৪) ও সাড়ে ৯ বছর বয়সি মেয়ে প্রিয়তি এবং সর্বশেষ নিজেও আক্রান্ত হন। খুব বেশি দেরি না করে পুরো পরিবারই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। উপসর্গ বুঝে চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষা দেন। রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও খুশখুশে কাশি, শরীর ব্যাথাটা এখনো রয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় কিছু সাধারণ রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। এতে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যাথা হাঁচির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে গেলেও অনেকের ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই মৌসুমে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণে এই উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে- এমনটা বলা যায় না। জ্বর হলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়ে নেন। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণে জ্বর কমলেও অন্য উপসর্গগুলো থেকে যায়। পরিস্থিতি জটিলও হয়ে পড়ে কখনো কখনো।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়েও চিন্তা বাড়ছে। সাধারণ জ্বর-সর্দি ভেবে প্রথমে অবহেলা করলেও পরে পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিমল চন্দ্র দে। উত্তরার বাসিন্দা বিমল দে ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম আবহাওয়া বদল হচ্ছে, হয়তো সে কারণেই জ্বর এসেছে। আমার যেহেতু ডায়বেটিস ও ব্লাড প্রেসার আছে তাই আর ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলাম। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে প্রতিদিনই প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদের চেম্বারে ভিড় করছেন অসংখ্য রোগী। তাদের অনেকের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে- এমনটা জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ ভোরের কাগজকে বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ শীতের শুরুতে আমাদের শ্বাসনালীর প্রদাহগুলো বেড়ে যায়। এই সময় রাইনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। এছাড়া নীরবে এখনো কিন্তু মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু এখন বেশ জেঁকে বসেছে। শুধু ঢাকা নয়, এখন পুরো দেশের অসুখ এই ডেঙ্গু।
সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভেজা, গরমের সময় প্রখর রোদে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি করে পানি পান, বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পড়ার অভ্যাসটা আবার চালু করা, গলায় প্রদাহ হলে কুসুম গরম পানি পান করা দরকার। জ্বর হলেই ডেঙ্গু বা করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে এমনটা ভেবে নেয়া ঠিক নয়। আবার একে অবহেলাও করা ঠিক নয়। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসক ঠিক করবেন রোগীকে ডেঙ্গু, করোনা নাকি অন্য কোনো ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক সেবন করা যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যসব ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারও এড়িয়ে চলতে হবে। জ্বর হলে শিশু, বয়োবৃদ্ধ এবং যারা বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন যেমন- ডায়বেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, তাদের এক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।