সংস্কার ও নির্বাচন
নিরপেক্ষ নির্বাচনী সংস্কার চায় বাম দলগুলো

ঝর্ণা মনি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিরপেক্ষ নির্বাচনী সংস্কার চায় বাম দলগুলো। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির আগেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করা উচিত বলে মনে করে তারা। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা চান বাম নেতারা। নিরপেক্ষ নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরতে সিপিবিসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু বাম দলগুলোসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ এখনো না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
ইতোমধ্যে ‘রাষ্ট্র সংস্কার এবং ছয় সংস্কার কমিশন গঠন’ ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সংস্কার ও নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। এসময় বিএনপি দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার একসঙ্গে এগিয়ে নেয়া হবে, যাতে দ্রুত একটা নির্বাচন করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতিসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন জোটটির নেতারা। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধানও চালু করার দাবি তাদের।
এক্ষেত্রে সরকার সময় ক্ষেপন করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বাম নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকার কেন অপেক্ষা করছে- এমন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন- প্রথমে তারা এসে বললেন, সংস্কারের অনেকগুলো কাজ করবেন। তিন মাস সময় দেয়া হলো, তিনমাস পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। তারা এখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করবেন না।
তাহলে কি কালক্ষেপণ? এই তিনমাস সময় লাগার তো কথা নয়? তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সংবিধান সংস্কার করবে সরকার। অনেকদিন ধরে দেশে যে সংকট সেই ব্যবস্থা উচ্ছেদের আকাঙ্খা আমরা করলাম। স্বাধীন দক্ষ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই মন্তব্য করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ফিরিয়ে আনা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও প্রচলিত ব্যবস্থা পরিবর্তন করে আনুপাতিক ব্যবস্থা জরুরি।
বাম নেতারা জানান, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের দায়িত্ব। এর বাইরে বাকি যে পাঁচটি বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- সেগুলোর প্রস্তাব আগে থেকেই তৈরি করে রাখতে হবে; যেটা নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে। আর এই সংস্কার কার্যক্রমগুলো সফল করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে হবে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে তাদের বসার কথা। এরপর নির্ভর করবে নির্বাচনের আগে কি কি সংস্কার কাজ তারা করতে চান এবং কোন কোন কাজগুলো পরের নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেবেন। এসব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এখুনি কমিশনের কাজ শুরু করা দরকার। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে এবং এর জন্য এখনই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়া জরুরি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে কাজ করবে? নির্বাচন সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রস্তাব দেয়া। অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই প্রস্তাব তৈরি করবে। সেই প্রস্তাব সরকার দেখবে তারপর আবারও অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকতে হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সকল রাজনৈতিক দলই মতামত ব্যক্ত করুক। কিছু সংস্কারের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। টাকা দিয়ে, পেশিশক্তি দিয়ে যদি ভোটে জিততে চাই, তাহলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই থাকবে। তাই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সততা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্বের সঙ্গে আমাদের প্রস্তাব উত্থাপন করব।