নির্বাচিত পার্লামেন্টই সংবিধান সংশোধন করবে: একান্ত সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া বিজয়কে অর্থবহ করতে রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে একটি ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ’ দরকার বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই সিনিয়র নেতার ভাষ্য, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ’ ঘোষণা হলেই দেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে- চলমান সংস্কার কার্যক্রম একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট। তাই নির্বাচনমুখী সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সংস্কার, সংবিধান পরিবর্তন, নির্বাচনী রোডম্যাপ, ইসলামিক দলগুলোর জোটগঠন, ভারতের সঙ্গে আগামীর সম্পর্ক, দলের কাউন্সিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তিনি। কথোপকথনের বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো। গুলশানের বাসায় বসে সালাহউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাৎকারটি নেন ভোরের কাগজের রিপোর্টার রুমানা জামান।
ভোরের কাগজ : ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেমন আছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : ৫ আগস্টের নতুন স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত আবহাওয়ায় যেমন থাকে, আমিও তেমনই আছি।
ভোরের কাগজ: দুই মাস হতে চলল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে, কেমন চলছে দেশ?
সালাউদ্দিন আহমেদ : দেশের জনগণ এই বিষয়ে ভালো উপলব্ধি করছে নিশ্চয়ই। তাছাড়া সরকারের উপদেষ্টা যারা দেশ চালাচ্ছেন; এখানে তাদের বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ন্যূনতম সংস্কার শেষে একটি সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। আমরা সরকারকে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছি; করেও যাব যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গণতান্ত্রিক ধারায় থাকে।
ভোরের কাগজ : রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিএনপি ৬টি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনগুলো কী ধরনের কাজ করছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : সংস্কারের জন্য যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে সেখানে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে। এসব প্রস্তাবনা তৈরি করতে আমরা একটি বিষয়ভিত্তিক ‘শ্যাডো’ কমিটি গঠন করেছি। এ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন।
ভোরের কাগজ : নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কী ভাবছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস গত হয়েছে। এর মধ্যে সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। আমরা হিসাব করে দেখছিলাম- ৬ মাস পর্যন্ত লাগে এই সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট ‘ফাইনালাইজ’ করতে। তার আগে যদি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী পরবর্তী তিন মাসে নির্বাচন করা কোনো সমস্যা বলে আমি মনে করি না। সময়টা তাহলে কত হলো? ছয় মাস আর তিন মাস; ৯ মাসই নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট।
ভোরের কাগজ : ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : ৩১ দফা মূলত জনগণের প্রতি বিএনপির অঙ্গীকারনামা। বিএনপি ও বিগত দিনে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যারা অংশীদার ছিলেন তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিশাল একটি পাবলিক মিটিংয়ে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। তখন জনগণের সামনে আমাদের একটি অঙ্গীকার ছিল- যদি আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হই; আমরা যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে একত্রে লড়াই-সংগ্রাম করছি- সেই সব দল নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করব। এই সরকার ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। সেটার উদ্দেশ্যে হচ্ছে- রাষ্ট্র কাঠামো, রাষ্ট্র মেরামত এবং সংবিধানে গণতান্ত্রিক সংস্কার। তার মধ্যে সংবিধান সংস্কার থেকে শুরু করে বিচার বিভাগীয় সংস্কার; এমনকি মিডিয়া সংস্কার কমিশন- আরো বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সংস্কার কমিটি গঠনের কথা বলা আছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের মধ্যে দিয়ে তারা যে সুপারিশ প্রণয়ন করবে সেটা সরকারে এলে আমরা বাস্তবায়ন করব। এখন এই ৩১ দফা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব।
ভোরের কাগজ : বিএনপি বলছে নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ দেবে। এ সময়ের পরিধি কেমন হবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে বলেছেন, দুটি প্রধান কাজ- সংস্কার ও নির্বাচন। আমি একটু অন্যভাবে বলি- নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলোতে তাদের প্রথমে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেমন- নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। প্রশাসন ও বিচার বিভাগ এবং পুলিশ বিভাগের সংস্কার। অর্থাৎ নির্বাচন ‘রিলেটেড’ সংস্কারগুলো করে তারা নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেবে। এটাই প্রাথমিক এবং প্রধান কাজ। আর রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত এবং সংস্কারের বিষয়টি ‘কন্টিনিউয়াস প্রসেস’। এটা আজকেই কিংবা এক বছরে শেষ হয়ে যাবে না। ৫ কিংবা ১০ বছর পর আবার করতে হবে। সুতারাং সব সংস্কার বাস্তবায়নের পর যদি মনে করি নির্বাচন হবে; সেটা একটি ‘আনসার্টিনিটি’। এটা ঠিক নয়। এ কারণেই আমরা বলছি, সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ সরকার ঘোষণা করুক। যাতে জাতি বুঝতে পারে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কখন যাচ্ছি। একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারে আমরা কখন যাব। বাংলাদেশের যে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত এবং অবস্থান- তাতে নির্বাচন দেরি হলে সংকট বাড়বে।
ভোরের কাগজ : বিএনপি সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন চায়?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : বিএনপি সাংবিধানিক ধারার বাইরে নেই। এই সরকার শপথ নিয়েছে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনেই। ‘চিফ জাস্টিসের’ কাছে রাষ্ট্রপতি ‘রেফারেন্সের’ জন্য পাঠিয়েছেন- এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি শপথ পড়াতে পারেন কিনা? চিফ জাস্টিস সমন্বিতভাবেই শপথ পড়াতে অনুমোদন দিয়েছেন। এখানো যেখানে যা হচ্ছে; সংবিধান মোতাবেকই হচ্ছে। একটি সেমিনারে প্রফেসর আলী রিয়াজ বলেছেন, সংবিধান পুনরায় লিখতে হবে। এমনকি সংবিধান পরিবর্তনের জন্য গণপরিষদ আহ্বানের কথা বলেছেন। আমি আশা করব এ বিষয়ে তিনি জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলোসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলবেন। আমরাও সংবিধান সংশোধনের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করছি। সব সুপারিশ আমলে নিয়েই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে; সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কী কী পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং জাতির সামনে সেটা খোলাসা করতে হবে।এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের সমস্ত প্রক্রিয়া যদি শেষ করতে চান, তবে অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার লাগবে। এছাড়া এটা কোনো বিপ্লবী সরকার নয় যে, গণপরিষদ করবেন। তাহলে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিলেন কেন? দেশে কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হয়নি যে বিপ্লবী সরকার আদেশ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। সংবিধান অনুযায়ীই দেশ পরিচালিত হবে। পরিবর্তন করতে হলেও সেটা নির্বাচনের পরে। তবে হ্যাঁ, যে সব বিষয় সংবিধান সংশোধনের মধ্যে আসবে; সে বিষয়গুলো যাতে রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনে আসবে তারা যেন মেনোফেস্টুতে রাখে অঙ্গীকার হিসেবে- আমরা পালামের্ন্টে গেলে এগুলো গ্রহণ করব।
ভোরের কাগজ: এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের কতটুকু সংস্কার সম্ভব?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : সংস্কারগুলো করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কারণ, প্রশাসনের সংস্কারগুলো কিছু নীতিমালা, রদবদল ও নিয়মনীতির মধ্যে আমরা যদি আগ্রহ প্রকাশ করি এবং বাস্তবায়ন শুরু হয়; তাহলে সেটা চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে অব্যাহত থাকবে। নিয়োগ, পদোন্নতি বদলি এবং সব বিষয়ে দলীয়করণ না করার জন্য, প্রশাসনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নীতিমালা করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনেও একই নিয়ম থাকা জরুরি। জুডিশিয়ারিতে কিছু বড় ধরনের সংস্কারের দরকার আছে। যেগুলো বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। যেমন- হাইকোর্ট ডিভিশন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে নিরপেক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং হাইকোর্ট ডিভিশনে যদি আওয়ামী লীগের নিয়োগকৃতদের সরানো হয়; এটা বড় সংস্কার হবে। একই সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি আইন করার প্রয়োজন রয়েছে যেটা আগে ছিল না। আইন এবং রুলস যেটা হলো- জাস্টিস ‘রিক্রুটমেন্ট রুলস’। এই আইনটা করে যদি নিয়োগটা শুরু হয়; সেটা আরেকটা বড় সংস্কার হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টকে নিরপেক্ষ করাটাও আমাদের দাবি। এটা আমাদের ৩১ দফায়ও রয়েছে। এছাড়া ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ যেটা অ্যাবোলিশ করেছে; পঞ্চম সংশোধনীতে ছিল। ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রিইনস্টেইট’ করতে হবে; তাহলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।
ভোরের কাগজ : আলোচনা রয়েছে ইসলামিক দলগুলো জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। যদি তেমন হয় তবে সেটা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করেন কিনা?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামের নির্বাচনী কৌশল অবশ্যই আলাদা হতে পারে। যদি তারা ভিন্ন ইসলামিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেন তো দোষের কি? সেটা তাদের অধিকার আছে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো চ্যালেঞ্জ আছে বলে আমি কখানোই মনে করি না। আমরা আমাদের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে ভাবছি।
ভোরের কাগজ : নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো বিএনপি কীভাবে মোকাবিলা করবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : এখন নতুন দিন, নতুন স্বাধীনতা, নতুন বিজয় দিবস, নতুন অঙ্গীকার। শত-সহস্র শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ ও দেশের পতাকা। এখন যদি আমরা নিজেদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পিছপা হই; জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না। তাছাড়া এটাই আমাদের শেষ সুযোগ শহীদের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বির্ণিমানের। সেই রাষ্ট্রে আমরা যাতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও আইনের শাসন পাই সেটা বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের প্রতিশ্রুতি আগেই আছে; শত-সহস্রাধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ দেশে এখন মানুষের মনে যে প্রত্যাশা, অভিপ্রায়, অভিব্যক্তি আমরা দেখেছি সেটাই তো সংবিধান। এবং সেই সংবিধান হলো বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান আইন। এই ম্যান্ডেট আমাদের সন্তানরা দিয়েছে। আমরা ইনশাল্লাহ সেটা বাস্তবায়ন করবই। কোনো রাজনৈতিক দলই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আবার স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে রাষ্ট্র শাসন করতে পারবে না। সেই সুযোগই নেই।
ভোরের কাগজ : সবাই বলছে জুলাই-আগস্টের বিপ্লব তার ত্যাগ নিয়েও সব জায়গায় কাড়াকাড়ি চলছে। ফলে সমাজে একটি অলিখিত বিভেদ তৈরি হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সালাহদ্দিন আহমেদ : স্বৈরাচারের কিছু প্রেতাত্মা ও গুটি কয়েক বুদ্ধিজীবী মিলে সমাজে ষড়যন্ত্রমূলক এ বিভেদ তৈরির পাঁয়তারা করছে। কিন্তু জাতির কাছে এটা পরিষ্কার; এই গণবিপ্লবে দলমত নির্বিশেষে কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ বাদ ছিল না- যারা অংশ নেয়নি। আমার কাছে মানবাধিকার সংগঠনের একটি হিসাব রয়েছে। যাতে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় ৭ হাজার ১৮৮ জন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। গুমের শিকার হয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জেলখানায় নির্যাতনে মৃত্যু; সব মিলে এই সংখ্যা। গুম হয়েছে ৭০৯ জন। এর মধ্যে ১৫৫ জন এখানো ফেরেনি। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২৬৮৮ জন। এর সঙ্গে যুক্ত হবে গত জুলাই-আগস্টের শহীদের সংখ্যা। এ আন্দোলনে ২২ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। কারো এক চোখ, কারো বা দুচোখই অন্ধ হয়ে গেছে। সুতারাং এ আন্দোলনের কৃতিত্ব কারো একার- এমন দাবি করা অবান্তর।
ভোরের কাগজ : রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে; দল হিসেবে বিএনপিতে সংস্কার করতে কী করছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : একটি রাজনৈতিক দলের সংস্কার হয় দলের গঠনতন্ত্র, দলের সংবিধান, দলের ঘোষণাপত্র- এগুলোতে পরিবর্তন হতে পারে। এ সকল পরিবর্তনের সঙ্গে সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন আনাটাই হচ্ছে দলের মূল সংস্কার। পাশাপাশি দলের ভেতরে যদি কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চায়; তাহলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ‘অ্যাকশন’ তো নেয়া হচ্ছেই।
ভোরের কাগজ : বিএনপি আাগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভারতনীতি কেমন হবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : দেশের জনগণ বিএনপিকে যদি রাষ্ট্র পরিচালনার ম্যান্ডেট দেয় তবে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে ‘বাইলেটারেল’ সম্পর্ক থাকে। এমনকি আমরা অবশ্যই সার্বভৌমত্ব নীতিতে ভারতের সঙ্গে ‘ডিল’ করব। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে শুধু ভারত নয়; যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যা দেশের স্বার্থের বিপরীতে; সেগুলো অবশ্যই বাতিল করব। এমনকি পরস্পর বন্ধুত্বপূর্ণ সখ্যতা কতটা গভীর হবে; সেটা নির্ভর করবে উভয় দেশের একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।
ভোরের কাগজ: এখনকার আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী শব্দ। গণহত্যাকারী কোনো রাজনৈতিক দল আগামীতে ভোটের জন্য রাস্তায় নামে কিনা; সেটা জনগণ দেখুক। জনগণ তাদের সমর্থন করবে কিনা; সেটা জনগণের সিদ্ধান্ত। যে দল গত ১৬ বছর দেশের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দেশ শাসন করেছে; তাদের বিষয়ে আমার এর বেশি কিছু বলার নেই।
ভোরের কাগজ : শিগগিরই কী বিএনপির কাউন্সিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। যতটা দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠিত হবে।
ভোরের কাগজ : নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রস্তুতি কেমন?
সালাউদ্দিন আহমেদ : নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত না হলেও কাজ চলছে। তবে বেশি সময় লাগবে না।
ভোরের কাগজ : গুমের শিকার হয়ে দীর্ঘ ৯ বছর আড়ালে থাকার জীবনে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কী?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমরা রাজনীতি করি, এই কারণে জেল-জুলুম আমাদের জন্য থাকে। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদকে গুম করে রাখা হবে- সেই অপসংস্কৃতি এদেশে ছিল না। আমার অনেক সহকর্মীর আমার মতো সৌভাগ্য হয়নি যে তাদের খুঁজে পাওয়া গেছে। এদেশে গুমের সংস্কৃতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হতে হবে। নতুন স্বাধীন দেশের দাবি- এ দেশে কোনো আয়না ঘর থাকবে না। দেশের মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত হতে হবে। আমি আমার গুমের কাহিনী ভুলে যেতে চাই।