আন্দোলন ও টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। আন্দোলন শুরুর পর থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট চলছে। গত কয়েকদিনের লাগাতার কর্মসূচি ও টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। গতকাল শনিবারও নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ ছিল না। রাস্তা বন্ধ করে রাখায় বৃষ্টির মধ্যেই যাত্রীরা বাস-রিকশা থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন। এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর কিছু এলাকার সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিন সকাল থেকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, শান্তিনগর, মিরপুর-১০, বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা, প্রগতি সরণি, খিলগাঁও, যমুনা ফিউচার পার্ক, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা মহানগরী অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে।
আন্দোলকারীরা রাজধানীর বেইলি রোড থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যানবাহন চলাচল থেমে যায়। রাস্তার চারদিকেই আটকে যায় শত শত যানবাহন। বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শান্তিনগরে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাড়াও আশপাশের স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এর ফলে মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কেও যানবাহন চলাচল থেমে যায়। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে গাবতলী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট থেকে নিউমার্কেট, শাহবাগ, আজিমপুর, গুলিস্থানসহ বিভিন্ন রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সায়েন্সল্যাব মোড়ের চারপাশের সড়কেও শত শত যানবাহন আটকে যায়। এ সময় ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করেই যাত্রীরা পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে অনেকটা পথ হেঁটে রিকশা নিয়ে রওনা হন।
শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে এই সড়কেও নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ যায়। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া-কাজলা এলাকায় অবরোধের কারণে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে স্বল্প দূরত্ব ও দূরপাল্লার রুটের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। শনিরআখড়া-চানখাঁরপুল রুটের যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয়নি। এতে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছে না। সড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধের পর বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবরোধের ফলে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে এই এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েন। দিনভর ভোগান্তি শেষে সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার সড়কেও কোটা বিরোধীরা অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। আফতাবনগরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে সকাল থেকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে ইস্টওয়েস্ট ছেড়ে মূল সড়কে অবস্থান নেন। এর ফলে এই সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে তারা রামপুরা ব্রিজে এসে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তা দখলে নেন। বাড্ডা লিংক রোডও অবরোধ করায় গুলশান, বনানী, কুড়িল, বারিধারা এলাকার বাসিন্দা ও অফিসগামী লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর কিছু এলাকার সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। গতকাল দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান জানিয়েছেন, সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় এখনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোটা আন্দোলনকারীরা রাজধানীর ৬৯টি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, দুটি উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কার্যালয়, ৪টি সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কার্যালয়, দুটি পুলিশ ফাঁড়ি ও ৩টি থানায় তাণ্ডব চালায়। পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়েছে। এতে মোট ৬১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।