×

প্রথম পাতা

সন্ত্রাস-নাশকতার পরিণাম

জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু
   

স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে যে কোনো সময় এই দলটি নিষিদ্ধের আদেশ জারি হতে পারে বলে জানা গেছে। নিষিদ্ধের আদেশ জারি হওয়ার পর দলটির সব ধরনের কার্যক্রম অবৈধ হবে এবং এর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে ২০১২ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা অসংখ্যবার দলটিকে ‘নিষিদ্ধ’ করার কথা বললেও গত ১২ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে জামায়াত-শিবির দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সশস্ত্র ক্যাডারদের ঢাকায় এনে তাণ্ডব চালিয়েছে। গত সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দলটিকে নিষিদ্ধের কাজ শুরু করে সরকার।

গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। যে কোনো মুহূর্তে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, ‘এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে’।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই আন্দোলনের পেছনের সন্ত্রাস, সুশীল সমাজের ডিমান্ড, ১৪ দলের ডিমান্ড, অতিসম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে, এগুলোর সঙ্গে জামায়াতের যোগসাজশ আছে। সবকিছু মিলিয়েই এটা করা হচ্ছে। সব এখনি জানাতে পারব না। এটা প্রক্রিয়াধীন। প্রক্রিয়া শেষে জানতে পারব।

এর আগে, গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এরপর গত মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে এবং কোন আইনি প্রক্রিয়ায় তা করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে বুধবারের মধ্যে। এরপর গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, কাজটি করা হবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারায় সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনো সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে; অথবা

ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখে, কোনো সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরী পরিস্থিতিতে অংশ নেয়, তাহলে তা ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে গণ্য হবে। এ আইনে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র গত জুনের শেষে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে। জুলাইয়ে তা সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছড়িয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে একপর্যায়ে সহিংসতায় গড়ায়। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই তাণ্ডব চালানো হয় এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালীর টোল প্লাজা এবং মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে।

এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে ১৫০ মানুষের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে সরকার, যদিও সংবাদমাধ্যমে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে নাশকতা করেছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী, আর তাতে মদত দিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি। বিএনপি প্রকাশ্যেই ছাত্রদের ওই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। নাশকতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে সংঘাতের জন্য উল্টো সরকারকেই দায়ী করেছে দলটি। আর জামায়াত বলেছে, অরাজক পরিস্থিতিতে সরকার ‘দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।

তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে এ দলের কর্মীরা জঙ্গি দলের মতো গোপন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সক্রিয় থাকা চেষ্টা করতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। তাদের নিষিদ্ধ করা হলে নতুন করে অশান্তি হবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবির এই অবস্থা তৈরি করেই ফেলেছে। এর পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেয়ার পরও আন্দোলন থামছে না। একটা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কোনোদিন এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতো না যদি তাদের পরামর্শদাতারা এই রকম পরামর্শ না দিত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এই যে এতগুলো মানুষ হতাহত হলো, শুধু কি পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমরাও প্রকাশ করব কার গুলিতে কত মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক দিনের একটা চাহিদা ছিল জামায়াত-শিবিরকে ব্যান করার, সেই প্রক্রিয়াটি চলছে। জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে জামায়াত-শিবির-বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, অনেক দিন ধরে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি ছিল, সেটার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিস্থিতির অবনতির জন্য যারা রয়েছেন, তাদেরও আইনের সামনে আনার প্রক্রিয়া চলছে। যারা এগুলো করছেন, জনগণকে সে সম্পর্কে জানাতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এসে তাদের দল করার রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো এবং সুশীল সমাজও জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে এসেছে। এটা জনগণেরও দাবি। আজকের (বুধবার) মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক কিছু হতে পারে, তবে এখনো আমি বলব, এটা প্রক্রিয়াধীন।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৪১ সালে জন্ম নেয়ার পর দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকাসহ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এই রাজনৈতিক দলটি প্রথমবার নিষিদ্ধ হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে, সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুসারে।

এর আগে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার নিয়ে জানতে চাইলে তাকে বলা হয়েছে- ওই যুবক যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যা করে তার লাশ ঝুলানোর পর নির্দেশদাতাকে মোবাইল ফোনে কল করে নিশ্চিত করেছে। এর প্রমাণ রয়েছে। বয়স বিবেচনায় তাকে আটক করা হয়নি। রাস্তায় ইউএন লেখা বাহনে সেনাবাহিনীর টহল প্রসঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে, তারা তাৎক্ষণিক এসব বাহন নিয়ে বের হয়েছিল। পরে সেসব ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App