সহিংসতার তদন্ত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, আন্তর্জাতিকভাবেও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থা আছে, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই। আমরা চাই এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা এতে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক। কারণ আমি জানি এতে আমার কোনো ঘাটতি ছিল না।
গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার ও মৎস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর।
কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনার তদন্তে আমরা ইতোমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারো দাবির অপেক্ষা আমি রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়ে দিয়েছি। আগে একজন বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। এখন আরো দুজন লোকবল বাড়িয়ে তাদের তদন্তের পরিধি আরো বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমরা বার বার আলোচনা করেছি। তাদের দাবিও মেনে নিয়েছি। দাবি মানবো কী- যেটা আমিই বাতিল করে দিয়েছি। এটাতো আমারই (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন) ইস্যু করা। আপিল করা হয় আপিল বিভাগে। সেখানে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়ে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়। কাজেই কোটা না থাকায় আমার জারি করা প্রজ্ঞাপনটাই আবার কার্যকর হয়। পরে আপিল বিভাগে থেকে সেটার রায়ও দিয়ে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়েছে- তাতে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন? তিনি বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়, আমি তো আরাম আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি দেশকে একটু উন্নত করতে। যেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেনো নষ্ট করা হলো? এই বিচারের ভার আমি দেশবাসীর ওপর দিলাম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৮১ সালে দেশে আসার পর থেকে গুলি, বোমা পুঁতে রেখে, আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করে বহুবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমিতো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র মুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবনযাপনকে আরো সহজ করে দেয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যেসব জিনিস মানুষকে সেবা দেয় সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত। একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সব থেকে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি। স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি। তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ৭টি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় মৎস পদক-২০২৪’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য, ৮টি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থও তুলে দেন তিনি। এছাড়া জেলেদের হাতে স্মার্ট আইডি কার্ডও বিতরণ করেন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানে মৎস চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও স্বর্ণপদক দেয়া হয়। দেশের মৎস খাতের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই জাতির পিতা এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা ও কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জনগণের পুষ্টির অধিকারও নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। জাতির পিতার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘মাছ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’
বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক এলাকার গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে যতরকম সুযোগ-সুবিধা লাগে তার ব্যবস্থা আমরা করব। কারণ এটা আমাদের কাজে লাগবে। পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ যাতে বাড়ে সে গবেষণাও করতে হবে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিত্যক্ত জলাভূমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে মৎস উৎপাদন বাড়াতে। পাশাপাশি, বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৫ বছর বিশ্বে পঞ্চম স্থান ধরে রেখেছে। আমি আহ্বান জানাচ্ছি সবাইকে আরো উদ্যোগী হয়ে এই অবস্থানকে এগিয়ে নিয়ে আসুন। মাছ চাষিরা যাতে মাছের ন্যায্যমূল্য পায় সে পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
দেশে তিনটি টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ মৎস খাতের উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো শুধু আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদাই পূরণ করবে না, জীবন-জীবিকার মানও উন্নত করবে। আমরা রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারব। আমি এটুকুই বলব, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। সেজন্য আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।