‘বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই’

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্বস্তিকা ডায়েট করছেন?
না তো! কেন রোগা লাগছে নাকি?
নতুন বছরে রোগা দেখাচ্ছে...
না না। কায়দার জামা পরেছি। তাই রোগা দেখাচ্ছে।
‘নিখোঁজ ২’ ওয়েব সিরিজ নিয়ে কী ভাবেন?
এবারের ‘নিখোঁজ ২’-এ আগের ঘটনার সমাধান খুঁজে পাবে দর্শক। প্রচুর মানুষ ইতোমধ্যেই ‘নিখোঁজ ২’ দেখে সরাসরি আমাকে সমাজমাধ্যমে লিখছেন। আমি লেখাগুলো ভাগ করে নিচ্ছি।
বাংলায় মহিলাদের প্রতিনিয়তই পুলিশের চরিত্র করতে দেখা যায়, এমনও নয়।
সেই কারণেই প্রথম থেকেই উত্তেজনা ছিল চরিত্রটা নিয়ে। এখানে পুলিশ শুধুই যে অপরাধ দমন করছে এমন নয়। এই চরিত্রটার মধ্যে পুলিশ ও মা পাশাপাশি চলছে। মায়ের জেদ আর পুলিশের দক্ষতা দুটোই এই চরিত্র দাবি করে। খানিকটা সত্য আর অনুভূতির রেষারেষি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এই চরিত্রে। পরিচালককে মাঝেমাঝেই বলতাম, মা কোথাও বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো! আজও কোথাও কোথাও তো ধরে নেয়া হয় মহিলা পুলিশ ততটা দক্ষ নয় যতটা পুরুষ।
মানে বর্তমান সময়েও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দেখা যায়...
অবশ্যই। ২০২৫ সালেও কর্মক্ষেত্রে আমাদের মহিলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে হয়। কোনো পুরুষের যদি পদোন্নতি হয়, সে ক্ষেত্রে বলা হয় পরিশ্রমের জোরে যোগ্যতা দিয়ে পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু একজন মহিলার ক্ষেত্রে বলা হয়, অনুচিত পন্থায় রফা করেছেন বা তার শরীরের বিনিময়, সৌন্দর্যের নিরিখে পদোন্নতি হয়েছে। সেটা তো রয়েছেই। মহিলাদের দক্ষতা, কাজের প্রতি অনুরাগ উপেক্ষা করা হয় সর্বতোভাবে।
আগের তুলনায় একটুও কি পরিস্থিতির বদল ঘটেছে?
আমাদের সমাজ ও দেশের অবস্থা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। আরজি করের ঘটনার পরে মনে হয়েছিল কত কিছু বদলাবে! সম্প্রতি মেট্রো স্টেশনে চুমুর ঘটনাটা নিয়েও তো কত কাণ্ড! মানসিকতার যে কোনো রদবদলই হয়নি তা স্পষ্ট। এই পুরো ঘটনায় দোষী একজনই, যিনি চুমু খাওয়ার ভিডিও করেছিলেন আর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে তো কোনো কথাই হলো না। তার অন্যায়টা নিয়ে কেউ কথা বলল না, উল্টো ভালোবেসে কেউ কিছু করলে সেটা নিয়ে হইচই করা হয়। মেয়েটি চুমু খেয়ে যত অপরাধ করল!
আরজি কর প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, সুদীপ্তা, স্বস্তিকারা সরে গেলেন...
একটা আন্দোলন হয়েছিল, সেটার তো একটা সমপতন হবেই। চিকিৎসকরাও কি এখন চিকিৎসা না করে ধর্মতলায় বসে রয়েছেন? আন্দোলন যদি এক বছর ধরে চলত, তা হলে আমরাও সেই মতো সময় বের করে যোগ দিতাম। সেটা তো হয়নি।
আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক মহল থেকে চাপ এসেছে?
একেবারেই না। কোনো বার্তাই আসেনি আমার কাছে। আন্দোলনটাই তো ঝিমিয়ে পড়েছে। আমাদের কথা বাদ দিন, আন্দোলন তো অনেক বেশি সাধারণ মানুষদের। তারা কি এখনো পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন? তা হলে আমরা কী করব? নিজেরাই কি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব প্রত্যেক দিন?
সিবিআই চার্জশিট দিতে পারল না, কোনো মন্তব্য করবেন না?
কী আর বলব? আমি তো বুঝতেই পারলাম না পুরো বিষয়টা। জামিনও পেয়ে গেল। খুব ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন আগে অনির্বাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বলেছিল, ‘এ সব করে কিছুই হবে না।’ তখন আমরা সবাই ওর কথা শুনে রেগে গিয়েছিলাম। এখন তো দেখছি ও ঠিকই বলেছিল।
এখন তো বয়কটের ডাক চলছে ইন্ডাস্ট্রিতে?
এগুলো বাজে কথা। সমাজমাধ্যমে চলে এসব। আমি তো শুটিং করছি। অবশ্য পূজার সময় কাজের ক্ষতি হয়েছিল।
মনে হচ্ছে না এই ধারার চর্চায় সিনেমাটা গৌণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? একসঙ্গে একাধিক ছবি মুক্তি পেলে এই যে আক্রমণাত্মক নানা কথা...
আমি এটা অনেক আগেই বলেছি। পরস্পরের পাশে কেউই নেই। সবাই নিজের নিজেরটা বোঝে। নিজেরটা ঠিক হলেই ব্যস! বাকি যা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে হোক। স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা ক্রমেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। তবে এর মাঝেই কাজ করে যেতে হবে। নিজেকে ঠিক রাখতে হবে।
নতুন বছরে কী পরিকল্পনা?
প্রচুর কাজ করব। মূলত মুম্বাইয়ে কাজ করাটাই প্রধান লক্ষ্য। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যাদের সঙ্গে এখনো কাজ করিনি, তাদের সঙ্গে কাজ করব। শিবুর সঙ্গে কাজ হয়নি। তাছাড়া কাজের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
সৃজিতের সঙ্গে কাজ করবেন?
এখন পর্যন্ত জানি না। ওর সঙ্গে তো হুট করে কাজ হয়ে যায়। এখন কাজের কথা হয়নি।
কাজের ক্ষেত্রে এই বয়সে এসে কি মনে হয় সৌন্দর্য ধরে রাখার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে? অনেকে যেমন বোটক্স করেন..
শুনুন, অভিনয় শেষ কথা। তবে আমার যদি কখনো ইচ্ছে হয়, আমি বোটক্স করাব। সবাই করাচ্ছে তাই আমাকেও করাতে হবে এমন নয়। যদি কখনো আমার মনে হয়, এই পাতলা ঠোঁট ভালো লাগছে না, অথবা কপালে অত্যধিক ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে, তা হলে করাব। মানুষ এত দিনে জেনে গিয়েছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে ভালো দেখতে। ওটা নতুন কিছু নয়। আমার সাজ, সৌন্দর্য মানুষ দেখে নিয়েছেন এই ২৫ বছরে। তা সে শাড়ি হোক অথবা বিকিনি। যা দেখেননি তা হলো নতুন চরিত্রের মাধ্যমে আমার অভিনয়। সেটা আমায় দেখাতে হবে।
ঋতুপর্ণা ও স্বস্তিকার পরবর্তী অভিনেত্রীরা কি একটানা লম্বা সময় ধরে কাজ করতে পারছেন বলে মনে হয়?
আমি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। তখন বৃদ্ধার চরিত্রকে কেন্দ্র করেই গল্প হতে হবে। ছবিতে দিদার চরিত্রের প্রয়োজন বলেই অভিনয় করব না।
দেব, জিৎ, যিশু, ঋত্বিক, অনির্বাণের ছবি আসছে। কিন্তু তনুশ্রী, শ্রাবন্তী, নুসরাত, পায়েলদের খুব কম দেখা যাচ্ছে ছবিতে? অভিনেত্রী বলেই কি?
না, আমার তা মনে হয় না। মহিলা বলে কাজ পাচ্ছেন না, এমন নয়। তারা কেন কাজ করছেন না, সেটা তারাই বলতে পারবেন। যখন কাজ শুরু করেছিলাম শুনতাম, লম্বা সময় পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। বাবা শিখিয়েছিলেন, পরের পাঁচ বছরে কোথায় থাকব সেটা না ভেবে এটা ভাবতে হবে যে, আগামী ২৫ বছরে আমি কোথায় থাকব। কত তাড়াতাড়ি উঠতে পারলাম, সেটা বড় কথা নয়। কতটা সময় সেখানে থাকতে পারলাম, সেটা জরুরি।
- মেলা ডেস্ক