দুই তারকার প্রিয় ৫ পূজামণ্ডপ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
অপর্ণা ঘোষ, অভিনেত্রী
দক্ষিণ নালাপাড়া, চট্টগ্রাম
আমার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়ায়। শৈশব, কৈশোর সবই কেটেছে ওখানে। যার কারণে দুর্গাপূজা ঘিরে সব স্মৃতি ওখানেই। আমাদের গ্রামের বাড়িতে পূজা নিয়ে অনেক বড় আয়োজন হতো। ওখানে যে থিমেই প্রতিমা বানানো হোক কিংবা যতটা স্বল্প বা বড় পরিসরে আয়োজন করা হোক না কেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় ওখানকার পূজা। এখনো যতই শুটিং থাকুক না কেন পূজাটা ওখানে কাটানোর চেষ্টা করি।
পাঁচবাড়ি, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার পাঁচবাড়ি পূজা মণ্ডপ নিয়ে আমার বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে। একবার তো হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল আমার ছোট বোন। তখন নাইন বা টেনে পড়ি। পাঁচবাড়িতে পুকুরের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে প্রতিমা বানানো হয়েছিল। সেখানে কীভাবে তারা জানি সিংহ তলোয়ার দিয়ে অসুরকে মারে আর রক্ত পড়ে, পুরো বিষয়টা কারেন্টের মাধ্যমে দেখানো হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে বাবাও ছিলেন। তিনি শো শেষে যেখানে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে ছিলেন না। আমরা দুই বোন তাকে খুঁজতে খুঁজতে একটা গলির সামনে চলে আসি। ভয়ে আমার বোন কান্না শুরু করে। আমি তখন বলি, চল আবার পেছনে ফিরে যাই। শেষ পর্যন্ত বাবাকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় খুঁজে পাই।
জে এম সেন হল, চট্টগ্রাম
সাধারণত নবমী ও দশমীর দিন জে এম সেন হলের পূজা দেখতে যাওয়া হয়। এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর ভিড় থাকে। কয়েক বছর আগে ওখানে কাগজ দিয়ে একটা প্রতিমা বানানো হয়েছিল। দারুণ লেগেছিল আমার বিষয়টা। আমার সঙ্গে পরিবারের মানুষ ছাড়াও ছোটবেলার বন্ধু-বান্ধবরা থাকে। সবাই মিলে সারা ধরে চট্টগ্রামের তাজবাড়ি, জিইসি মোড়সহ মোটামুটি সাত-আটটা মণ্ডপে ঘুরি। সবচেয়ে ভালো লাগে পতেঙ্গা সৈকতে যখন সবাই মিলে দুর্গা মাকে বিসর্জন দেয়।
পুরান ঢাকা
যদিও ঢাকার পূজা আমার কাছে কেমন জানি মরা মরা লাগে। প্রাণ নেই, নিষ্প্রাণ। ঢাকায় পূজা খুব করাও হয় না। তবু কোনো কারণে যদি চট্টগ্রামে যেতে না পারি তাহলে পুরান ঢাকার মণ্ডপগুলোতে যাওয়া হয়। তাঁতীবাজার, ল²ীবাজার, শাঁখারীবাজারের মণ্ডপগুলো বেশ রঙিন। পুরো এলাকায় রঙিন থাকে। পুরান ঢাকায় প্রতিমা দেখার চেয়ে খাওয়া-দাওয়াটা বেশি হয়।
কলকাতা
একদম ছোটবেলায় একবার কলকাতার পূজা দেখতে গিয়েছিলাম পরিবারের সঙ্গে। বয়স কত হবে তখন? ছয় কিংবা সাত। ওখানে তো ভূরিভূরি প্রতিমা। নানান থিমে, নানা ঢঙ্গের প্রতিমা। প্রচুর ভিড় ছিল। ঢোকায় যাচ্ছিল না। অনেক ছোট থাকায় স্বাভাবিকভাবে আমার এসব ভিড়-বাট্টা ভালো লাগেনি। আর এখন আমি দেশেই পূজা কাটাতে পছন্দ করি।
বাপ্পি চৌধুরী, চিত্রনায়ক
রামকৃষ্ণ মিশন, নারায়ণগঞ্জ
ঢাকাতে থাকা হলেও অষ্টমীর দিন নারায়ণগঞ্জে গিয়ে হাজির হই। মিশনের কুমারী পূজাটা কখনোই মিস করি না। মনে পড়ে এদিন পাঞ্জাবি পরে অঞ্জলি দেয়ার কথা। আমার সঙ্গে থাকে আমার বাবা, মা ও আত্মীয়-স্বজন। এখানকার যে নিরামিষ প্রসাদ দেয়া হয়, তা খেতে খুবই ভালো লাগে। এদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরে ঘুরে বেড়াই। আলোকসজ্জা দেখি, বাজি ফোটাই।
শাঁখারীবাজার, পুরান ঢাকা
ঢাকায় পূজা দেখার সবচেয়ে মজা পুরান ঢাকায়। অলিগলিতে এত এত মণ্ডপ, যে মনে হয় কলকাতার কোনো শহরে এসে হাজির হয়েছি। সাধারণত পুরান ঢাকার পূজা দেখতে রাতেই বের হই। শাঁখারীবাজার দিয়েই এখানকার পূজা দেখা শুরু হয়। এরপর ল²ীবাজার, তাঁতীবাজার কিছুই বাদ যায় না। পূজার সময় ফটোগ্রাফি করতেও ভালো লাগে। আর এই ক’দিন খাওয়া-দাওয়ার কোনো হিসাব থাকে না। একবার তো পুরান ঢাকায় সারারাত ঘুরে পূজা দেখেছিলাম।
নরসিংদীর পূজামণ্ডপ
সাধারণত নবমীর দিন আমরা নরসিংদী ঘুরতে যাই। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বের হই বেশি। গতবারও গিয়েছিলাম। মফস্বলে পূজা দেখতে গেলে যেটা হয়- একসঙ্গে অনেক মণ্ডপ ঘোরা যায়। পূজার মেলা থেকে রকমারি খাবার কিনে খেতে ভালোই লাগে। এখন তো আমার অনেক ভক্ত আছে, যারা পৌঁছানোর আগেই আমার যাওয়ার খবর পেয়ে যায়। যার কারণে ভিড়টা সামলাতে হয় বেশি। ভক্তদের সঙ্গে সেলফি তোলাটাও বেশ উপভোগ করি এখন।
শিকদার বাড়ি, বাগেরহাট
বাগেরহাটের হাকিমপুরের শিকদার বাড়িতে প্রতিবারই এশিয়ার অন্যতম দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। একবার ৭০০-এর বেশি প্রতিমা নিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পূজা দেখতে গিয়ে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করেছিল। প্রতি বছরই এখানে অনেক তারকা পূজা দেখতে যান। এখানকার প্রতিমাগুলো যেন একটু বেশি নান্দনিক।
কলকাতার পূজামণ্ডপ
কলকাতা শহরেও পূজা দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সারা পৃথিবীতে পূজার জন্য বিখ্যাত শহরটি। বলিউডের অনেক তারকাই আসেন এ সময় পূজা দেখতে। পুরো শহর যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় পূজার সময়টায়। অনেক বিখ্যাত পূজামণ্ডপ আছে কলকাতা শহরে। এর মাঝে দেশপ্রিয় পার্ক, বেহাল বরিশা ক্লাব, কলেজ স্কয়ার, যোধপুর পার্কের মণ্ডপগুলো ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখেছি। ওরা সব সময় নানান থিমে মণ্ডপগুলো সাজায়। গরুর গাড়ি, অসুর, পৃথিবী, মহাকাশযানের থিমগুলো বেশ আকর্ষণীয় ছিল।