ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক
দিনাজপুরে আলুর বাম্পার ফলন

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মো. দেলোয়ার হোসেন, দিনাজপুর থেকে : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর দিনাজপুর অঞ্চলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আলু বীজে বাম্পার ফলন হওয়ায় সন্তুষ্ট আলু চাষিরা। তবে কৃষকদের ঠকিয়ে পাইকাররা স্বল্প মূল্যে জমি থেকে আলু কিনে নেয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।
জানা যায়, হিমাগার থেকে বীজ আলু বের করার পর বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিলারের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় বীজ আলু। বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি হবে। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করেন কৃষক। বীজের দাম সহনীয়, প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তাই কৃষকরা জমিতে জাতের আলু রোপণ করছেন। শ্রমিকরাও বসে না থেকে আলু ক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। মহিলারাও বিএডিসি আলু বীজ হিমাগারে ও ক্ষেতে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে কথা হয় বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের আলু চাষি কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএডিসির আলু বীজ রোপণ করে এবার আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছি। আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএডিসি দিনাজপুর বীজ অঞ্চলের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ। তবে ফলনে লাভবান হলেও দামে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে তবে বাজারে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি থাকতে হয়। এবার কৃষকদের কাছ থেকে ২২ থেকে ২৫ দরে আলু কিনেছে পাইকাররা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে কৃষক।
জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ রামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে ৫ জাতের আলু রোপণ করেছি। গত শুক্রবার বিকালে আলু উঠার পর, ক্ষেত থেকে পাইকাররা ২২ টাকা কেজি দরে ২৫ মণ আলু নিয়ে গেছে।
একই এলাকার কৃষক মো. খাদেমুল হক বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে আগাম ৭টি জাতের আলু চাষ করছি। এবারে আলু চাষে ৪ বিঘা জমিতে সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। জমি থেকে গত ৭ দিনে আলু বিক্রি করেছি ৫ লাখ টাকার। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। আমি আলুক্ষেত থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি।
খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের আলুচাষি রোস্তম, মনিরুজ্জামান ও গোলাম কিবরিয়া জানান, গত বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বেড়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে এবার ভালো দাম পাব।
ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের আলু চাষি মোস্তাকিম বিল্লাহ ও নুরুল হক বলেন, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু মাঠ থেকে তোলা যায় বলে আমরা আলু চাষের আগ্রহী হয়েছি। আগে এ সময়ে কোনো কাজ থাকতো না। এখন আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দিনাজপুর বিএডিসির উপপরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বীজ আলু রোপণের উত্তম সময়। গুণগত বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শনে গিয়ে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রদর্শনী, প্লট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইসহ উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, সানসাইন, সান্তানা ও লেডিরোসেটা জাতের আলু বেশি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সানসাইন ও সান্ত¡না আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, এবার দিনাজপুরে ৪৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, গত ৩ দিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষিদের ক্ষেত পরিদর্শনকালে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এবারে আগাম উন্নত ৭টি জাতের আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে ।