×

মুক্তচিন্তা

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বাধা ও উত্তরণের পথ

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বাধা ও উত্তরণের পথ

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বাধা ও উত্তরণের পথ

   

আজকের বিশ্বে, যেখানে মানুষ স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে, সেখানে অনেক সময় পররাষ্ট্রনীতির জটিলতা দেশগুলোর অগ্রযাত্রাকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে বাধাগ্রস্ত করছে। কৌশলগতভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সৃষ্টি, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারগুলোকে বাধা দেওয়া এবং সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা—এগুলোই বর্তমানে কিছু আন্তর্জাতিক কূটনীতির সাধারণ রূপ। কূটনীতিকদের এই ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে অবরুদ্ধ করে, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

এর উদাহরণস্বরূপ দেখা যায়, স্বৈরশাসকদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করা কিংবা প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন বাধা তৈরি করা যা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলা এবং স্থায়ী উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

একদিকে, বাংলাদেশের একটি অংশ যখন বাংলাদেশ বিরোধী কথাবার্তা এবং কার্যকলাপে মগ্ন, অন্যদিকে ভারতের জনগণ তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে কেন্দ্রীভূত রেখেছে। ভারত শিক্ষা, শিল্পের প্রসার, এবং বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের প্রতিশ্রুতি দেশটিকে বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ তালিকায় পৌঁছে দিয়েছে।

এর বিপরীতে, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কিছু স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠী ভারত সরকারের কূটনৈতিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের জাতীয় উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে বাধা সৃষ্টি করছে।

স্বৈরশাসক এবং উন্নয়নের বাস্তবতা

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং উত্তরণের পথ আসলে কোন দিকে? হয়তো দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন হতো, যদি স্বৈরশাসকদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা না করে দেশে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা যেত। একইসঙ্গে জনমতকে দেশ সংস্কারের কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা সম্ভব হতো। তবে এ ধরনের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে বর্তমান আন্দোলন এবং সংস্কার প্রচেষ্টা অসফল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি গুরুতর সংকটকাল অতিক্রম করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং স্বাধীনচেতা নীতির ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এ সংকটের পেছনে রয়েছে সরকার ও শাসকের নানামুখী কুকর্ম, ভারতের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা, দুর্নীতি ও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, এবং জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণের মতো গুরুতর অভিযোগ।

শেখ হাসিনার শাসন এবং পরিবারের কুকর্ম

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা শোনা গেলেও বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের জন্য এক মহাসংকট সৃষ্টি করেছে।

* নির্বাচন ব্যবস্থার অযোগ্যতা: ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো ছিল নির্লজ্জ প্রহসন। ভোট জালিয়াতি, বিরোধী প্রার্থীদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

* সংবাদমাধ্যমের দমন: সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকারকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে।

* পাচার ও দুর্নীতি: শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চ্যানেল ও বিনিয়োগের নামে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, এবং অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে চলে গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক শোষণকে আরও বাড়িয়েছে।

* দেশের সম্পদ অপচয়: পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অপব্যবহার দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে। এসব প্রকল্পে ব্যয়ের অপচয়, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে দেশের করদাতাদের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপানো হয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

* ক্ষমতার অপব্যবহার: পরিবারতন্ত্রের চর্চা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাকে এককভাবে কুক্ষিগত করার প্রবণতা দেশটির প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় নীতি ও পারিবারিক প্রভাবের কারণে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু শাসন কার্যকর হয়নি।

* জনমতের প্রতি অবজ্ঞা: সাধারণ মানুষের অধিকার ও দাবির প্রতি যত্নবান না হয়ে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন দমন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব, এবং কণ্ঠরোধের মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রকাশে বাধা দিয়েছে।

এগুলো শেখ হাসিনার শাসনের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে দেশের সম্পদ ও জনগণের অধিকার বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।

দেশান্তর ও রাজনৈতিক নির্বাসন

শেখ হাসিনার শাসনে বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দমনের প্রচেষ্টার কারণে অনেক নেতা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

* শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় ও উস্কানি: শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অনেক সহযোগী পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাংলাদেশে আরও গভীর হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাধাগ্রস্ত কার্যক্রম

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন হস্তক্ষেপ এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

* অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা: শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। এতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশকে একটি স্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় ভারতের সাথে চলমান সম্পর্ক; পুনর্মূল্যায়নের দাবি

দেশের জনগণের মধ্যে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে ভারত সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের দাবি। শেখ হাসিনার শাসনকালে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা বিতর্কিত দিক জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি, সীমান্ত হত্যা, এবং ভারতের প্রতি একপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে বিস্তৃত অসন্তোষ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন না করলে, দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, স্বাধীনভাবে দেশের উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে।

শেখ হাসিনার শাসনকালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক বাংলাদেশে একাধিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে:

তিস্তা চুক্তি ও জলবায়ু সংকট:

তিস্তা নদী নিয়ে চুক্তির অগ্রগতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে ভারতীয় অবস্থানের কারণে এই নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে কোনো কার্যকরী সমাধান আসেনি। বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে দেশের কৃষি উৎপাদনে আঘাত লাগতে পারে, যা বৃহত্তর জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

সীমান্ত হত্যা:

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যার ঘটনাগুলো সম্পর্কের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যদিও দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কিছু সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে সীমান্ত হত্যা, বিশেষত নিরীহ নাগরিকদের হত্যা, সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি প্রধান সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাণিজ্য ও শুল্ক নীতি:

বাংলাদেশ ভারতীয় বাজারে অনেক ধরনের পণ্যের একক রপ্তানি সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু ভারতের বাণিজ্যিক নীতির কিছু দিক বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভারতের শুল্ক নীতি, বিশেষত কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ বা কাঁচামালের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন ঠেকিয়ে দেয়, যা অনেক সময় দেশে বিরোধ সৃষ্টি করে।

ভারতের শক্তিশালী প্রভাব:

ভারতের কিছু একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে এমন কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে, যা বাংলাদেশিরা মনে করেন দেশের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি যখন ভারতের প্রতি অনেকটাই নির্ভরশীল, তখন জনমানুষের মধ্যে এই চিত্র নিয়ে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন নীতিমালা ও নেতৃত্বের প্রয়োজন: বাংলাদেশে পরিবর্তনের সময়

এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, যে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নৈতিক, এবং জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমান শাসক দলের বিদায় নেওয়ার সময় চলে এসেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে:

১. গণতান্ত্রিক চেতনা:

সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হতে হবে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেওয়া হবে। সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা দূর করতে, নতুন নেতৃত্বকে শাসনে আনার মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে যে, দেশের গণতন্ত্র কার্যকর ও প্রগতি সাধন করতে পারে।

২. দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা:

একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি:

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনায় দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ভারতের অযৌক্তিক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন একটি সুষম পররাষ্ট্রনীতি।

৪. নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি:

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার প্রতি প্রবণতা বেড়েছে, যার কারণে দেশের রাজনীতি বেশি অস্থির এবং ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতা হবে জনগণের হাতে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, জনগণের কল্যাণে একযোগ কাজ করবে।

নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়

শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমন একটি বাংলাদেশ চায়, যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। শুধু শাসনব্যবস্থা বদলানোর মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে ফেরানো সম্ভব হবে না, বরং একটি নতুন নীতিমালা এবং নেতৃত্বের গঠন খুবই জরুরি। শেখ হাসিনার সরকারের কুৎসিত শাসন ব্যবস্থার জন্য যতই প্রচেষ্টা চলুক, সত্যিটা হলো— দেশের জনগণ আর এই পরিস্থিতি মেনে নেবে না।

বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ crossroads-এর মুখোমুখি। ভারতের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় এসেছে। একটি নৈতিক এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও রাজনৈতিক পরিবেশে তৃণমূলের মানুষও তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে, এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে, যা আমাদের প্রতিটি নাগরিকের জন্য এক সুন্দর, উন্নত এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে, সেই লক্ষ্যে সময় এসেছে এক নতুন বাংলাদেশের পথচলা শুরু করার।

অতীতের শাসনের অবসান ও একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। দেশের জনগণ আর এই স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি এবং ভারতের প্রভাবের শৃঙ্খল মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। নতুন নেতৃত্ব, নীতি এবং কার্যকর প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবারও একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভরশীল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সবাইকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ করে ড. ইউনুস এবং তার অন্তর্বর্তী প্রশাসনের যে সময়টুকু হাতে রয়েছে, সেটি যেন সর্বোচ্চ কার্যকরভাবে ব্যবহার হয়, সে জন্য আমাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভেতরে বা বাইরে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক আচরণ বা কার্যকলাপ যেন বাংলাদেশের মাটিতে ঠাঁই না পায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে সজাগ ও তৎপর থাকতে হবে।

সর্বোপরি, দলমত নির্বিশেষে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে বিশ্বের কোনো শক্তিই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ, এবং আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই হবে জাতির ভবিষ্যৎ সাফল্যের ভিত্তি। এটি জাগ্রত জনতার শক্তিতে নির্মিত একটি গৌরবময় বাংলাদেশ।

উন্নয়নের পথে উত্তরণ: কীভাবে এগোতে হবে?

এই বাস্তবতা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়: উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ঐক্য গড়ে তোলা, শিক্ষায় বিনিয়োগ করা এবং শক্তিশালী শিল্পখাত তৈরি করা যে কোনো দেশের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। সংঘাত এবং বিভাজনের রাজনীতি এড়িয়ে দেশের সকল জনগণকে একটি সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে সহযোগিতার মাধ্যমে। আঞ্চলিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দেশটি একটি সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী বৈশ্বিক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কঠিন হলেও, দেশটি যদি সঠিকভাবে কৌশল নির্ধারণ করে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়, তবে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব। যখন দেখছি কলকাতার দাদারা স্বৈরাচার ও পলাতক খুনি শেখ হাসিনার প্রশংসা করছে, কারণ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তখনই বুঝেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হতে শুরু করেছে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, Rahman.Mridha@gmail.com

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App