×

মুক্তচিন্তা

অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে কার স্বার্থ হাসিল হচ্ছে?

Icon

সাইফুল ইসলাম শান্ত

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৭ পিএম

অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে কার স্বার্থ হাসিল হচ্ছে?

মেট্রোরেলে ধ্বংসযজ্ঞ। লিখেছেন সাইফুল ইসলাম শান্ত

   

আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক দল বা  সংগঠন দাবি আদায়ে রাজপথই কেন বেছে নেয়? জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে কি কোনো দাবি আদায় হয় না। জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা করে আমরা কার ক্ষতি করছি। সরকারের ক্ষতি করা মানেই তো দেশের ক্ষতি। আর দেশের ক্ষতি মানেই নিজের ক্ষতি। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করতেই কি এমন সহিংসতা। অর্থনীতি ধ্বংস করে আমরা কি আবারো সেই ভিক্ষুকের জাতি হতে চাই। 

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশে চলমান সহিংসতা ও কারফিউ’র কারণে গত এক সপ্তাহে সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সারাদেশে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইতোমধ্যে জারি করা কারফিউ অনেকটা শিথিল করেছে সরকার। রোববার থেকে মোবাইল ইন্টারনেটও চালু করা হয়েছে। তার আগে চালু করা হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হলেও দেশের যে অর্থনীতিক ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব দীর্ঘদিন পড়বে এটা বলাই যায়। 

এ পরিস্থিতির নেপথ্যের কারণ আমাদের সবারই জানা। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি জুন মাসে বাতিল করেন হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নামানো হয় বিজিবি। একপর্যায়ে সরকার সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে প্রতিদিনই কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও চলমান কারফিউতে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আস্থাহীনতার সংকট। এখনও সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যতদিন পর্যন্ত দেশ স্বাভাবিক জায়গায় যেতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত এই অর্থনীতির ক্ষতিটা চলতেই থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এমন সহিংসতা চালানো হয়েছে। দেশের মানুষকেই এই সহিংসতার বিচার করতে হবে। এইভাবে আর কেউ যেন কোন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেই দিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) এই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে সেটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রথম কাজ হলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করা। এটা না করতে পারলে দেশের অর্থনীতির দিকে নজর দিতে পারবে না। এর ফলে চলমান সমস্যা আরও প্রকট হয়ে যাবে। সরকারকে শুধু নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির যে খাতগুলো জটিল হয়ে গেছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। 

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে এই কয়েকদিনের স্থবিরতায় শুধু পোশাক খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সহিংসতার পাঁচ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মতে, বাংলাদেশের ইমেজকে নষ্ট করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সরকারি স্থাপনায় হামলাকে পৃথিবীর ঘৃণিত ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে ছোট করা হয়েছে।

প্রশ্ন জাগে এই আন্দোলনের নেপথ্যে আসলে কারা ছিল? ছাত্ররা এত পরিকল্পিত আন্দোলন করতে পারে তা অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। আসলে কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই একটা সন্দেহ সবার মনে দানা বেঁধে ছিল। আন্দোলনটা আসলে কারা করছে? কারা করাচ্ছে? আন্দোলনকারীদের চেহারা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে এতটুকু বাকি নেই এই কর্মকাণ্ড কারা করেছে। তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। 

কয়েকদিনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে স্তম্ভিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও। মেট্রোরেলসহ কয়েকটি স্থাপনা বিদেশি কূটনীতিকদের সরেজমিনে দেখিয়েছে সরকার। এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা বলেছেন, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। এমনটি জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, গত ১৫ বছরে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে সংঘটিত সহিংসতা ও অচলাবস্থা সেই অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য বড় ধাক্কা। এই জ্বালাও-পোড়াও করে আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ নষ্ট করে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাই না।

লেখক: সাইফুল ইসলাম শান্ত, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App