ফুডপান্ডাকে বাঁচাতে ই-ক্যাবের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম

ফুডপান্ডাকে বাঁচাতে ই-ক্যাবের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ!
আওয়ামী লীগের পরিচয় ধারণ করা ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) দুইবারের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন। তার ১৭ দিন পর গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে অনলাইনভিত্তিক খাবার ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডাকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে পদত্যাগ করেছেন ই-ক্যাবের সকল ইসি মেম্বার।
ই-ক্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মাদ সাহাব উদ্দিন শিপনের হোয়াটসঅ্যাপে পদত্যাগ করেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা আম্বারিন রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার তাসফিন আলম, গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মোহাম্মদ ইলমুল হক সজীব, কমিউনিকেশন অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মো. সাঈদুর রহমান এবং কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক শাহরিয়ার হাসান। রাত ১টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ তথ্য প্রকাশ করেন সৈয়দা আম্বারিন রেজা।
এছাড়া সংগঠনটি থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন ই-ক্যাব পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা, অর্থ-সম্পাদক আসিফ আহনাফ এবং পরিচালক মোহাম্মদ অর্নব মোস্তফা। অর্থাৎ ১১ সদস্যের এই কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মাদ সাহাব উদ্দিন শিপন ছাড়া বাকি ১০ সদস্যই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
প্রথমে বৃহস্পতিবার সকালে দেশের বাইরে থেকে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হওয়ার কারণ দেখিয়ে পরিচালক পথ থেকে পদত্যাগের কথা জানান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। এরপর মধ্যরাতে হোয়াটসঅ্যাপে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে গ্রুপ কলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপনকে বিষয়টি অবহিত করেন আম্বারিন রেজা। এসময় ওই কলে আরো ৪ জন ইসি সদস্য ছিলেন।
ছবিতে ডানে সৈয়দা আম্বারিন রেজা, তার পাশে মা বরিশাল জেলা পরিষদের নির্বাচনে (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়) সংরক্ষিত নারী সদস্য আইরিন রেজা ও বাবা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সৈয়দ মাসুদ রেজা
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শমী কায়সারের মত ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন আওয়ামী পরিবারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব ফুডপান্ডা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা আম্বারিন রেজা। গতকাল থেকে আম্বারিন রেজার বাবা-মা ও নিজের আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে আলোচনা হতে থাকলে তিনি অন্য সদস্যদের চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ফলে ছুটির দিনে তাড়াহুড়া করে সবাই হোয়াটসঅ্যাপে পদত্যাগ করেন।
জানা গেছে সৈয়দা আম্বারিন রেজার বাবা সৈয়দ মাসুদ রেজা বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সপ্তম সংসদে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
এছাড়া সৈয়দা আম্বারিন রেজার মা আইরিন রেজা ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলা পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য (বাকেরগঞ্জ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও বরিশাল সদর) ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। সৈয়দ মাসুদ রেজা ও আইরিন রেজার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে সৈয়দা আম্বারিন রেজাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার বিষয়টি শুক্রবার সামনে আসলে পদত্যাগ করে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে সৈয়দা আম্বারিন রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি। তবে একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কারণ একটাই, আমাদের মেয়াদ শেষ। অনেকে মনে করছেন, আমরা মেয়াদ বাড়িয়ে থাকতে চাইছি বা এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছি। কিন্তু না। আমরা স্বচ্ছ থাকার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত ২৭ জুলাই নতুন কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেশের পরিস্থিতির কারণে সেটার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এরপর নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও পদত্যাগ করেন। ই–ক্যাব নেতৃত্বকে পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করতে আমরা পদত্যাগ করেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৮ জুন প্রথমবারের মতো ই-ক্যাবের নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১১টি পদে ৩১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে ২০২২-২৪ মেয়াদের কমিটি গঠিত হয়। ২০২৪-২৬ মেয়াদের ইসির জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বর্তমান কমিটির প্রায় সবাই পদত্যাগ করলেন।