পুষ্পা নয়, যে কারণে বাণিজ্য হারাচ্ছে বাংলা ছবি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আবারো অন্য ভাষার ছবির দাপটে বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় অসন্তোষ। আল্লু অর্জুন নাকি কিছুতেই রাজত্ব ছাড়বেন না ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ নামের পশ্চিম বাংলার সিনেমাতে।
বড় পর্দায় বারবার ঘোষণা তার, “ম্যায় ঝুকেগা নহি”! বাস্তবেও সেটাই করে দেখাচ্ছেন ‘পুষ্পা’ ওরফে আল্লু অর্জুন। ২ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে মুক্তি পেয়েছে ‘পুষ্পা ২’। অগ্রিম বুকিং থেকেই রেকর্ড গড়েছে ছবিটি। হাজার কোটির ক্লাব পেরিয়ে দু’হাজার কোটির ক্লাব লক্ষ্য তার। সারাদেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও তার দাপট অব্যাহত। সদ্য ছবির নায়ক আইনি গেরোয় ফেঁসেছেন। তিনি হাজতবন্দি, সারা দেশ তাকে নিয়ে বীরপুজোয় মেতেছে।
এদিকে বড়দিনে পশ্চিমবঙ্গে চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে— ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। চারটি ছবিই ‘পুষ্পা’র দাপটে কাবু! এই চিন্তাতেই ঘুম ছুটেছে ছবির প্রযোজক, পরিচালকদের।
ঘটনা কিছুটা হলেও সত্যি। দেবের বক্তব্যে তার প্রমাণ মেলে। বুধবার প্রযোজক-অভিনেতা সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। লিখছেন, ‘এখনও ‘খাদান’ ছবির অগ্রিম বুকিং শুরু হয়নি বলে দুঃখিত। ভিন্ন ভাষার ছবির কারণে ছবির শো, অগ্রিম বুকিং সব ব্যাহত।’
ছবির পরিচালক সুজিত রিনো দত্ত অবশ্য আশাবাদী। তিনি সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন, ছবির গুণে শো বাড়বে। যদিও তখনও পর্যন্ত জানা যায়নি কোন ছবি কোন প্রেক্ষাগৃহে ক’টা শো পাচ্ছে।
দফায় দফায় বৈঠকের পর বিষয়টির ওপরে আলো ফেলেছেন কিছু হলমালিক, পরিবেশক। যেমন, প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের মালিক অরিজিৎ দত্ত। তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, ভেঙে পড়ার মতো কিছু হয়নি। সব ছবির অগ্রিম বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার প্রেক্ষাগৃহে ‘খাদান’ দু’টি শো পাচ্ছে। একটি পাচ্ছে ‘চালচিত্র’। একটি ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। একটি শো-তে ‘পুষ্পা ২’।” প্রেক্ষাগৃহে রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’ তা হলে জায়গা পেলো না? প্রশ্ন রাখতেই পাল্টা প্রশ্ন অরিজিতের, যে ছবি এখনও ব্যবসা দিচ্ছে তাকে কোন যুক্তিতে সরাব? আমাকেও তো ব্যবসা করতে হবে!” প্রায় একই চেহারা নবীনা প্রেক্ষাগৃহেও। সেখানে ‘খাদান’ আর মানসী সিংহের দ্বিতীয় ছবি জায়গা পেয়েছে। বাকি ‘পুষ্পা’র দখলে।
আরো পড়ুন : কন্যা জন্মের পর থেকে অপরাধবোধে ভুগছেন বরুণ ধাওয়ান
এক দিকে, বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর ডাক। অন্য দিকে, ভিন্ন ভাষার ছবির কাছে ধরাশায়ী বাংলা ছবি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবেশক যদিও এই বক্তব্যের ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, উৎসবের সময়ে একসঙ্গে এতগুলো ছবি নিয়ে এলে এই সমস্যা হবেই। এই কারণে বলিউড একসঙ্গে দুটোর বেশি ছবিমুক্তি ঘটায় না। তার অনুযোগ, এই বোঝাপড়া টলিউডে থাকলে প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে এই টানাপড়েন হত না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশকের এই কথা কিন্তু মানতে নারাজ ‘সন্তান’ ছবির পরিচালক রাজ। তিনি তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আমরা মুখেই বলি। বাস্তবে কেউ বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিই না। সেটা হলে আজ সব প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবি চলত।
তার আফসোস, এই ছবি কেবল বাংলাতেই দেখা যায়। অন্য রাজ্যে সবার আগে সেই রাজ্যের ভাষা প্রাধান্য পায়। তার পর অন্য ভাষা। পশ্চিমবঙ্গ ঠিক তার উল্টো পথে চলে। এই জায়গা থেকে রাজের দাবি, আমরা যদি শক্ত হাতে হাল ধরি, জোরালো প্রতিবাদ জানাই, তা হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।