×

সিলেট

সুনামগঞ্জে কোরআন অবমাননার অভিযোগে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, কী ঘটেছিল?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ এএম

সুনামগঞ্জে কোরআন অবমাননার অভিযোগে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, কী ঘটেছিল?

আটককৃত হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

   

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় এক হিন্দু যুবকের কোরআন অবমাননার অভিযোগকে ঘিরে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার মংলারগাঁও গ্রামের যুবক সামাজিক মাধ্যমে কোরআন অবমাননা করেছে এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় কয়েকটি বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসময় একটি মন্দিরের একাংশে ভাঙচুরের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এই ঘটনার পরপরই মঙ্গলবার রাতেই কোরআন অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত ওই যুবককে আটক করে পুলিশ। দোয়ারাবাজার থানার ওসি তদন্ত মো. শামসুদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানান, যেই যুবক কোরআন অবমাননার এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আমরা আটক করেছি। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনার বুধবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় পরিবেশ শান্ত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু বলেন, কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে কিছু ভাঙচুর হয়েছে। এ ঘটনায় সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ফেসবুকে এটি নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ।

ওই এলাকায় কোরআন অবমাননার অভিযোগে আটককৃত ওই হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।

যেখান থেকে ঘটনার শুরু

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় মংলারগাও গ্রামের এক যুবক মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে কোরআন অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে একটি স্ক্রিনশটের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই যুবকের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

সুনামগঞ্জের সাংবাদিক এ আর জুয়েল জানান, ওই ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে দোয়ারাবাজার স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন। এবং তারা বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসে।

এলাকা থেকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে ওই যুবককে আটক করে প্রথমে দোয়ারা বাজার থানায় নিয়ে আসা হয়। দোয়ারা বাজার থানার ওসি তদন্ত মো. শামসুদ্দিন বলেন, এই বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ খবর পেয়ে ওই যুবককে এলাকা থেকে অ্যারেস্ট করে। পরে বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় তাকে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, স্থানীয় বিক্ষোভকারী খবর পেয়ে থানায় যাওয়ার আগেই তাকে জেলা সদরে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

সন্ধ্যার পর থেকে যখন কোরআন অবমাননার অভিযোগে মুসলমান সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বিক্ষোভ করছিল সে সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককে পোস্ট দিতে দেখা যায়।

আরো পড়ুন : আইনজীবী সাইফুল হত্যা: প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

স্থানীয় সাংবাদিক এ আর জুয়েল মঙ্গলবার রাত ও বুধবারে ঘটনাস্থলে গিয়ে সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ থেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের বিক্ষুদ্ধরা অভিযুক্ত ওই হিন্দু যুবকের বাড়িঘরসহ আশপাশের বাড়িঘর এবং বাজারের কিছু দোকানপাটে ভাঙচুর চালায়। এসময় একটি মন্দিরে গেটের অংশে ভাঙচুর হয়েছে। স্থানীয় বাজারের একটি জুয়েলারি দোকানেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

জুয়েল বলেন, আমি যতটুকু দেখেছি এসবের বেশিরভাগই ছিল টিনের ঘর ও টিনের শাটার দেয়া দোকান। সব মিলিয়ে ২০টির মতো বাড়ি ও দোকানে হামলা ভাঙচুর হতে পারে। বুধবার সকালে তিনি নিজে একটি মন্দিরের গেট ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখেছেন।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে ঘটনার পরপরই পুলিশ-সেনাবাহিনীর তৎপরতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় দ্রুতই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু বলেন, যারা বিক্ষোভ করছিলেন কিছু জনতার হাতে লাঠি ছিল। তারা লাঠি দিয়ে কয়েকটি বাড়িঘর দোকানপাটে ভাঙচুর করে। তবে সেখানে লুটপাটের ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। অল্প কিছু বাড়িঘরে ও দোকানে সামান্য কিছু হামলা হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই ২০টি হবে না। যাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার অনেকগুলো টিনশেড বাড়ি ও দোকান। স্থানীয় জনতা ইসকন মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে তারা পারেনি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, তবে জগন্নাথ মন্দিরের গেটে হামলা ও ভেতরে ঢুকে কয়েকটি হাড়ি পাতিল ও চেয়ার ভাঙা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর বাইরে অন্য কোথাও মন্দিরে হামলার ঘটনা আমরা জানতে পারিনি।

ভাঙচুর প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দিন বলেন, যা ভাইরাল করা হচ্ছে বাস্তবে সে রকম কিছু হয়নি। শুধু কয়েকটি বাড়িঘরে ইটপাটকেল ছাড়া আমাদের তেমন বড় কোনো ঘটনার খবর জানা নেই।

শান্তি সমাবেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই ঘটনাটি ঘিরে উত্তেজনার খবর ছড়িয়েছিল সুনামগঞ্জসহ সারাদেশে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীও আসে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন।স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি বেশি খারাপের দিকে যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু বলেন, সর্বোচ্চ তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিটের একটা উত্তেজনা ছিল। তারপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায়।

মঙ্গলবার ঘটনার পরও এলাকায় কিছু থমথমে পরিবেশ ছিল। বুধবার সকালে স্থানীয় মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়, স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে শান্তি সমাবেশ করে সেনাবাহিনী। সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App