এশিয়া কাপ জয়ের নায়ক গতির ঝড় তোলা কে এই ইমন

মোহাম্মদ রনি খাঁ
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম

ইকবাল হোসেন ইমন, ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের আর ১০ জন ছেলের মতোই ক্রিকেটে হাতখড়ি ইকবাল হোসেন ইমনের। তবে একটা সময়ে না ঘুরিয়েই বল ছুঁড়তেন এই তরুণ। এজন্য কটাক্ষ করে এক বড় ভাই বলেছিলেন, ‘‘তুই তো ঢিল মারিস রে’’। তখন ভালো পেসার হওয়ার পণ করেন। পাশে এগিয়ে আসেন তার মামার বন্ধু মৌলভীবাজার ক্রিকেট একাডেমির কোচ রাসেল আহমেদ।
এশিয়া সেরা ইমনের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। তবে ক্রিকেট না, ইমনের বাবা-মা চেয়েছিলেন ছেলে বিলেতে পাড়ি জমাক। কিন্তু পরিবারের অমতে, ২২ গজকেই বেছে নেন ইমন। আর এই তরুণের পরিবারকে কোচ রাসেল ভরসা দিয়েছিলেন। সেই রাসেল এখন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। কিন্তু বিদেশে থাকলেও ঠিকই শিষ্যের খোঁজ-খবর রাখছেন।
অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক না পাওয়ার হতাশায় পুরেছিলেন এই পেসার। তবে পরের দুই বছরে শুধু টেপ টেনিসে বল করে ফিটনেস ধরে রাখেন। বল করার সময়ে আলাদা একটা জেদ কাজ করতো তার। মনে মনে বলতেন, ‘জাতীয় দলে ফিরবই।’ এবার নায়কের বেশেই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি এখন এশিয়ার যুব ক্রিকেটের সেরা বোলার।
টুর্নামেন্টজুড়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জাদু দেখিয়েছেন ইমন। ফাইনালেও জাদুর কাঠি নাড়িয়েছেন। ভারতকে গুঁড়িয়ে শিরোপা উল্লাসে অন্যতম অবদান তার। ফলস্বরূপ, ফাইনাল সেরার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও এই ক্রিকেটারের হাতেই উঠেছে। আটবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৫৯ রানে হারানোর দিনে ২৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন এই পেসার। আসরজুড়ে নিয়েছেন ১৩ উইকেট।
গেল বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ জয়ের সারথিও এই পেসার। মূলত যুব ক্রিকেট লিগ থেকে নজর কেড়েছিলেন ইমন। পূর্বাঞ্চলের হয়ে এক ম্যাচে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। সেই পারফরম্যান্সের সুবাদে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী ট্যাংক একাডেমির হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে খুব একটা নজর কাড়তে পারেননি। ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪ উইকেট নেন।
এরপর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের অভিষেকে নজর কেড়েছিলেন। আবাহনীর বিপক্ষে ৯ ওভারে ১০৪ রান খরচ করেছিলেন। এর মধ্যে নাঈম শেখ ও মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেটও ছিল।মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ভক্ত ইমন। তার জার্সির পেছনেও ‘২ নম্বর’ ভেসে ওঠে। ম্যাশের মতোই দেশসেরা পেসার হতে চান এই তরুণ। সেই বার্তাই যেন দিচ্ছেন বারবার।
এদিকে যুব এশিয়া কাপে পারফর্ম করে জাতীয় দল এবং ‘এ’ দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। যদিও বাস্তবতা বলছে, ভিন্ন কথা। কেননা, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আলো ছড়ালেও কালের বিবর্তন আর বিসিবির উদাসীনতায় হারিয়ে গেছে অনেক ক্রিকেটার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পেসারদের বাড়তি কদর করছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থাটি। তাই তরুণ এই পেসারকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদও বাড়ছে।