বাইলসের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
সিমোন বাইলসের হাত ধরে নারীদের দলগত ফাইনালের জিমন্যাস্টিকসে স্বর্ণ জিতল যুক্তরাষ্ট্র। স্বর্ণ জয়ের পর সতীর্থদের সঙ্গে উচ্ছ¡াসে ভেসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাতারকা। এই ইভেন্টে রুপা ইতালি আর ব্রোঞ্জ গেছে ব্রাজিলের ঘরে।
সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকের মাঝপথে ‘টুইস্টিজ’র কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাইলস। এটি এমন একধরনের মানসিক অবস্থা, যা জিমন্যাস্টদের বাতাসে ভেসে থাকার সময়ে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এ নিয়ে গত তিন বছরে জিমন্যাস্টিকস ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনে কাজ হয়েছে অনেক। স্বর্ণ জিতেই যার ফল পেল তারা।
অস্ট্রেলিয়ান সাঁতারু কাইলি ম্যাককিউন নারীদের ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছেন। মঙ্গলবার রাতে তার শিরোপা রক্ষার লড়াইয়ে নিজের অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙে আরেকটি স্বর্ণ পেয়েছেন। বিশ্ব রেকর্ডধারী রেগান স্মিথেকে দ্বৈরথে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি।
এই নিয়ে অলিম্পিকে পরপর দুটি স্বর্ণ জেতা দ্বিতীয় মহিলা হয়েছেন এই ২৩ বছর বয়সি কুইন্সল্যান্ডের সাঁতারু। নারীদের ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোক ফাইনালে বিশ্ব রেকর্ডধারী রেগান স্মিথকে পরাজিত করে তার প্রয়াত বাবাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ম্যাককিউন।
তিনি জানান, ‘আমার একটি সুপার পাওয়ার আছে এবং সেটি হলেন আমার বাবা। আমি বিশ্বাস করি তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন।’
প্যারিসের অলিম্পিকের লা ডিফেন্স পুলে ম্যাককিউন সাঁতার শেষ করেছেন ৫৭.৩৩ সেকেন্ডে। গড়েছেন নতুন অলিম্পিক রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটিও অবশ্য তারই ছিল। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ৫৭.৪৭ সেকেন্ডের রেকর্ড করে স্বর্ণ জিতেছিলেন তিনি। ম্যাককিউন ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে ৫৭.৩৩ সেকেন্ডের নতুন একটি বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। গত জুন মাসে এই রেকর্ডটি ভেঙেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রেগান স্মিথ। ইউএস অলিম্পিক ট্রায়ালে ৫৭.১৩ সেকেন্ডের নতুন এক বিশ্বরেকর্ড করেন। যদিও গত রাতের ফাইনালে স্মিথ ৫৭.৩৩ সেকেন্ড করে রৌপ্য জিতেছেন।
ম্যাককিউন এই জয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেভাবে এতদূর এগিয়েছেন তাতেই খুশি হয়ে ম্যাককিওন বলেন, ‘মেডেল বা মেডেলের ট্যালি বা এ জাতীয় কিছুর উদ্দেশে অলিম্পিকে আসিনি। আমি মজা করতে অলিম্পিকে এসেছি। আমি আমার সেরাকে দিতে এসেছি এখানে।’
তার অন্যতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্মিথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমিই। যেটি বোঝাতে চাচ্ছি সেটি হলো আমি আমার নিজের ক্রীড়াবিদ, যা-ই ঘটুক না কেন, তাতে আমি খুশি।’
এই জয় আগামী বছরগুলোতে নারীদের ১০০ ব্যাকস্ট্রোকে ম্যাককিউনের আধিপত্য অব্যাহত রাখবে। এবার অলিম্পিকে সবার নজন কেড়েছেন সামার ম্যাকিনটোশ। ১৭ বছর বয়সি এই কিশোরীর জন্ম কানাডার টরন্টো শহরের অন্টারিওতে। জন্মের পর সাঁতারে অনুপ্রেরণা হিসেবে আইডল হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাকে। ম্যাকিনটোশের মা জিল হোর্সটেডও ছিলেন কানাডার বিখ্যাত সাঁতারু। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ অলিম্পিকে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন। এবার মায়ের পথ ধরে অলিম্পিকের মঞ্চে বিশ্বজয় করলেন কিশোরী ম্যাকিনটোশ। প্যারিসের নীল জলে সাঁতারে চমক দেখিয়ে স্বর্ণপদক নিজের করে নিয়েছেন এই কানাডিয়ান কিশোরী।
পরশু প্যারিস অলিম্পিকে ৪০০ মিটার মিডলে মাত্র ৪ মিনিট ২৭.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন ম্যাকিনটোশ। এই ইভেন্টে ম্যাকিনটোশের চতুর্থ দ্রুততম টাইমিং এটি। যদিও এই ইভেন্টের বিশ্বরেকর্ডও তার। সেটি হলো ৪ মিনিট ২৪.৩৮ সেকেন্ড।
অবশ্য টোকিও অলিম্পিক থেকেই ম্যাকিনটোশের চমক দেখে ফেলে পুরো বিশ্ব। মাত্র ১৪ বছর বয়সে কানাডার সাঁতারু দলের সঙ্গে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন এই কিশোরী। সেবার অল্পের জন্য পদক গলায় না দিতে পারলেও তিনি যে সাঁতারে কানাডিয়ানদের স্বপ্নজয়ের সারথি হতে যাচ্ছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছিল।
টোকিও অলিম্পিকের পর মাঝের এই সময়টায় নিজেকে আরো প্রস্তুত করেছেন ম্যাকিনটোশ। শানিয়েছেন নিজের সাঁতারু প্রতিভা, যার প্রমাণ তো মিলে গেল প্যারিসের নীল জলে।
প্যারিস অলিম্পিকে ম্যাকিনটোশের প্রথম চমকটা ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। যেখানে কিংবদন্তি কেটি লেডিকিকে পেছনে ফেলে রূপা জিতে নেন ম্যাকিনটোশ। এখানেই থেমে থাকেননি। স্বপ্নযাত্রায় স্বর্ণ ছোঁয়া যে তখনো বাকি। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল ৪০০ মিটার মিডলে। যেখানে সবাইকে ছাপিয়ে স্বর্ণপদক গলায় পরেন ম্যাকিনটোশ।
স্বর্ণ জয়ের হাসি ফোটার পর পোডিয়ামে উঠে কিছুটা আবেগি হয়ে যান এই বিস্ময় বালিকা। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে নিজ দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে ঠোঁট মেলানোর সময় মনে পড়ে যায় তার ছোটবেলার স্মৃতি। সেই স্মৃতিচারণ করে স্বর্ণজয়ী কিশোরী বলেন, ‘এখনো নিজেকে আমার সেই ১০ বছর বয়সি মেয়েটি মনে হচ্ছে। ছেলেবেলায় যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, সেই পথ ধরেই ছুটে চলার চেষ্টা করছি। আমি এবং যতদিন সম্ভব চাই এই খেলায় থাকতে।
আমার মনে পড়ে, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাইতাম।
এখন অলিম্পিকে এসে এখানে গলা মেলাতে পারাটা দারুণ।’
অলিম্পিকের মতো মর্যাদাপূর্ণ আসরে স্বর্ণের মেডেল পরার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ম্যাকিনটোশ বলেছেন, ‘অনুভূতি? আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা (স্বর্ণজয়) অবাস্তব। স্বর্ণপদক জিতে এই পোডিয়ামে দাঁড়ানো আমার স্বপ্ন ছিল। সেটি পূরণ করতে পেরে খুবই খুশি।’
এরপরই নিজেকে তৈরি করার গল্প শোনালেন এই তরুণী, ‘যতবারই বিশ্বমঞ্চে খেলি, কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে, সেটা সম্পর্কে আরো বেশি করে শিখি। সেটা মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ও আবেগের জায়গা থেকে। খুব বেশি উত্তেজিত হই না, ভেঙেও পড়ি না। নিজের ফলের ওপর নির্ভর করি।