কয়লা উত্তোলন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বড়পুকুরিয়া খনিতে

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনির দুটি কোল ইয়ার্ড প্রায় আড়াই লাখ টন কয়লায় পরিপূর্ণ। ফলে কয়লা রাখার আর কোনো জায়গা নেই। স্থানাভাবে যে কোনো সময় কয়লা উত্তোলন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহার কম হওয়ায় এবং গত আগস্ট থেকে কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে ভূগর্ভে উৎপাদনশীল কোল ফেইসে গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এবং চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় দ্রুত খনি ইয়ার্ড ফাঁকা করা কিংবা কয়লা রাখার নতুন জায়গা ঠিক করা নতুবা খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি করতে হবে। তা না হলে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দিতে হবে।
জানা গেছে, খনির ১৪১৪ কোল ফেইস থেকে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। গত ৩ আগস্ট থেকে এই ফেইসে উৎপাদন শুরু হয় এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উৎপাদন চলবে বলে খনি কর্তৃপক্ষ আশা করছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত ১৪১৪ নং ফেইস থেকে উত্তোলিত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন কয়লা। ওই ফেইস থেকে আরো প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা উত্তোলত হতে পারে। বিসিএমসিএল এর ৩টি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। এরমধ্যে একটিতে সেডিমেন্ট কোল রয়েছে। অপর দুটি কোল ইয়ার্ডের ধারণ মতা প্রায় ২ লাখ টন। বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে।
আরো পড়ুন : বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় সাবেক আইজিপি শহীদুল ও যুগ্ম সচিব কিবরিয়া রিমান্ডে
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়ায় আগস্ট থেকে তারা গড়ে দৈনিক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টন কয়লা নিচ্ছে। ফলে খনির কোল ইয়ার্ডে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টন কয়লা জমা হচ্ছে। দ্রুত কয়লা সরিয়ে নেয়ার জন্য বিসিএমসিএল গত ১ অক্টোবর ও ২৩ অক্টোবর দুইদফা পত্র দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে মৌখিকভাবেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (বপুতাবিকে) প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, বিসিএমসিএল প্রতিদিন যে পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করতে পারবে তাদের মতামতের আলোকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ঠিক করা আছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন যে পরিমাণ কয়লা লাগবে সেই পরিমাণ কয়লা ‘বপুতাবিকে’ নিবে। বিসিএমসিএল-এ প্রতিদিন যেখানে তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন হতো সেখানে গত আগস্ট থেকে প্রায় পাঁচহাজার টন কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। হঠাৎ করে কয়লার উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপুল পরিমাণ মজুদ গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইয়ার্ডে সাতদিনের কয়লা মজুদ রাখার কথা। সেখানে একমাসের কয়লা মজুদ রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইয়ার্ডে বর্তমানে ৭০-৮০ হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বিসিএমসিএল থেকে উত্তোলিত সমস্ত কয়লা তাদের। খনি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই তা খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ইউনিট চালু রয়েছে। ১ নম্বর ইউনিটে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ৬৫ মেগাওয়াট এবং ৩ নম্বর ইউনিটে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী।