পর্তুগালে অনিয়মিত অভিবাসীদের কাজ করার সুযোগ বাতিল

হাফিজ আল আসাদ, লিসবন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
পর্তুগালে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য কাজ করা এবং বসবাসের সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। যা হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ঘোষণা করা হলো। এর ফলে অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসী কর্মীরা কাজের ভিসার জন্য আবেদনরত অবস্থায় দেশটিতে থাকার অনুমতি পাবেন না। দেশটির অভিবাসন বিষয়ক নীতির প্রধান ও উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস বলেছেন, এই পরিবর্তন ইউরোপীয় বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তবে এনজিও প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ডানপন্থি শক্তির চাপের ফলস্বরূপ এসেছে। তারা বলছেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করা ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো সরকারের নীতিতে কঠোরতা আনতে প্রভাবিত করেছে।
ফ্রাইটাস উল্লেখ করেছেন, অনিয়মিতভাবে দেশে ঢোকার সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে অনেক অভিবাসী পর্তুগালের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তিনি বলেন, এই সুযোগটি দ্রুত বন্ধ করা উচিত। বর্তমানে নিয়মিতকরণ সম্পর্কিত ৪০ হাজারেরও বেশি আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
জুন থেকে কাজ করতে ইচ্ছুক অভিবাসী শ্রমিকদের পর্তুগালে বসবাসের অনুমতি বা রেসিডেন্স পারমিটের জন্য বিদেশে অবস্থিত পর্তুগিজ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে হবে। এই শর্তটি অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে, কারণ অনেক দেশ থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য পর্তুগালের দূতাবাস বা কনস্যুলেট নেই। উদাহরণস্বরূপ, নেপাল বা বাংলাদেশের শ্রমিকদেরকে ভারতের নয়াদিল্লির পর্তুগিজ দূতাবাসে যেতে হবে।
পর্তুগিজ কৃষক সমিতির মহাসচিব লুইস মিরা এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ফসল কাটার সময় আমাদের অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অভিবাসী কর্মীরা দ্রুত এবং অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া পর্তুগালে আসতে পারেন।
পর্তুগালের অর্থনীতি অভিবাসী কর্মীদের উপর নির্ভরশীল। বেশিরভাগ অভিবাসী এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসে এবং কৃষিতে নিযুক্ত হয়। অভিবাসী শ্রমিকেরা সাধারণত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে প্রবেশ করে। এখানে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো পর্তুগালেও অনিয়মিত অভিবাসন একটি আলোচিত বিষয়। অতি ডানপন্থি দলগুলো এ ইস্যুতে বিতর্ক উসকে দিচ্ছে। পর্তুগালের জাতীয়তাবাদী দল শেগা অভিবাসনের বিরোধিতা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ফ্রাইটাস বলেছেন, সরকার কম অভিবাসী চায় বিষয়টি এমন নয়, বরং শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার নীতিমালা প্রয়োজন। তিনি বলেন, যারা আসেন তাদের সমাজে একীভূত করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদেশি কর্মী প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: শিক্ষকদের সম্মান এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা
নতুন নীতি মানবপাচারকারী চক্রের শিকার থেকে অভিবাসীদের রক্ষা করবে বলে মনে করছেন ফ্রাইটাস। তবে এনজিওগুলো সতর্ক করেছে যে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হতে পারে এবং অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।