×

রাজনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

রাশিয়ার আগ্রহ ও রাজনৈতিক অবস্থান

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

রাশিয়ার আগ্রহ ও রাজনৈতিক অবস্থান

ছবি : সংগৃহীত

   

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সারাবিশ্বেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। রাশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কারণে মস্কোর আগ্রহ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর রাশিয়ার রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কির উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘দুমা’ ও দলের কার্যালয়ে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ১৩২টি শ্যাম্পেনের বোতল খুলে উদযাপন করেছিলেন। ঝিরিনোভস্কি বিশ্বাস করেছিলেন, ট্রাম্পের বিজয়ের ফলে রুশ-মার্কিন সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

এ সময় আরো কিছু রুশ কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম ট্রাম্পের বিজয়ের উদযাপন করেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান এমনকি মার্কিন পতাকা উড়িয়ে মস্কোর রাস্তায় গাড়ি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মস্কো তখন আশা করেছিল, রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন এবং ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন। কিন্তু বাস্তবে সেসব কিছুই ঘটেনি।

রুশ সংবাদপত্র নেজাভিসিমায়া গেজেটার প্রধান সম্পাদক কনস্ট্যান্টিন রেমচুকভ বলেন, এতসব প্রত্যাশার বিপরীতে বাস্তবে প্রাপ্তি ছিল খুবই কম। ট্রাম্পের প্রশাসন রাশিয়ায় মানবাধিকার নিয়ে কোনো প্রচারণা চালায়নি। ফলে রুশ নাগরিকদের মধ্যে যারা ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন সম্ভাবনা দেখেছিলেন, তাদের হতাশা বেড়ে যায়। ট্রাম্পের শাসনামলে রাশিয়ার ওপর সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যা অনেকের বিশ্বাসের বিপরীতে ছিল।

এবারের নির্বাচনের আগে রুশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনার বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার বিষয়টি স্পষ্ট। পরিবর্তে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রশংসা করতে। যদিও পুতিনের প্রশংসাকে ‘ক্রেমলিন ট্রোলিং’ বা রসিকতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, তিনি হ্যারিসের ‘সংক্রামক হাসি’ পছন্দ করেন।

তবে বাস্তবে পুতিনের মুখে হাসির কারণ হ্যারিস নন, বরং ট্রাম্প। ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে ট্রাম্প তার প্রচারণায় বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করছেন। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের জন্য পুতিনকে দায়ী করার বিষয়ে ট্রাম্পের অনিচ্ছা স্পষ্ট। সাম্প্রতিক নির্বাচনী বিতর্কে ইউক্রেনের জন্য তার সমর্থন না জানানোর কারণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ইউক্রেনের যুদ্ধই হতো না। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস ইউক্রেনের পক্ষে সরাসরি কথা বলছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্টকে খুনি স্বৈরশাসক বলেও উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার টিভি চ্যানেলগুলোতে হ্যারিসের সমালোচনা করা হলেও তার রাজনৈতিক সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় এবং একজন সামান্য ব্যবধানে হেরে যান, তবে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষি-বিতর্ক বেড়ে যাবে। এর ফলে নির্বাচনের পর বিশৃঙ্খলা এবং সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়বে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈদেশিক নীতির বিষয়ে মার্কিন সরকারের মনোযোগ কমাতে পারে। 

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় রুশ-মার্কিন সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তা আরও অবনতি ঘটে। জো বাইডেনের শাসনামলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রাশিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনোভের মতে, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক কার্যত ভেঙে পড়েছে। বাইডেনের সঙ্গে জেনেভায় বৈঠকের মাত্র আট মাসের মাথায় ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের নির্দেশ দেন পুতিন।

এরপর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার এক সুনামি শুরু হয়। মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক, হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, যা রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এসব দেখে এখন বিশ্বাস করা কঠিন যে, এক সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে অংশীদার হিসাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। 

১৯৮৭ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক মিখাইল গর্বাচফ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিত করার লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর পর ১৯৯১ সালে মার্কিন ফার্স্ট লেডি বারবারা বুশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের রাইসা গর্বাচফ মস্কোতে একটি অসাধারণ ভাস্কর্য উন্মোচন করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাল্টে গেছে, যা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আরো পড়ুন : সর্বশেষ জরিপে কে এগিয়ে, ট্রাম্প নাকি কমলা?

টাইমলাইন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App