×

রাজনীতি

যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

   

যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

জনসংযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেয়া এবং নিজ নিজ এলাকায় দলের প্রতিটি ইউনিটকে পুনর্গঠন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছেন তারা। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আগামী নির্বাচনের জন্য দল ও নিজের অবস্থান সুসংহত করে রাখা।

দলটির নেতারা বলছেন গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা দলের নেতাদের পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যারা শীর্ষ নেতা আছেন তাদের সহায়তার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের চিঠি দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনে বিএনপি জিতলে ‘সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন’ এবং ‘দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে বিএনপির প্রস্তুতি ও কর্মকাণ্ডে সেটিই প্রাধান্য পাচ্ছে।

আরো পড়ুন: সবশেষ কবে, কখন বিদেশ গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া

সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদেরও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি যে সহযোগিতা করবে সেটি তাদেরকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে নেতারা বলছেন বিএনপির সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এবার মূলত প্রাধান্য পাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া দলীয় প্রার্থী, বিশেষ করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতারা। এছাড়া দলের সাবেক এমপিদের মধ্যে যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারাও নির্বাচনের জন্য দলের বিবেচনায় থাকার ইঙ্গিত পেয়েছেন।

দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, নির্বাচনমুখী দল হিসেবে নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি প্রস্তুতি সবসময়ই দলের থাকে এবং সে অনুযায়ীই এখন তারা কাজ করছেন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি সবসময়ই আমাদের ছিল এবং এটি থাকেও। তবে সময়ে সময়ে এর নানাদিক আপডেট কিংবা কিছু পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনগুলো আমরা করছি।

প্রসঙ্গত, বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে দলটি অংশ নিয়েছিলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হয়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো দলটি।

সাংগঠনিক যত প্রস্তুতি

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচনায় রেখে দলের কার্যক্রম এখন এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দলের চেয়ারম্যান বলেছেন নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অর্থাৎ জাতীয় সরকার করে দল পরিচালনা করা হবে। যেসব দল আন্তরিকভাবে বিএনপির সঙ্গে ছিল তারাও সেই সরকারে থাকবেন। ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতেও এ বিষয়টিও নিঃসন্দেহে বিবেচনায় থাকবে। কোনো কোনো এলাকায় তারাও দলের বিবেচনায় থাকবেন।

মূলত ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই দেশজুড়ে বিএনপির বেশিরভাগ কমিটি হয়েছে ঢাকা থেকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে দলের নেতারা মামলা ও হামলাসহ নানা কারণে এলাকায় অনিয়মিত ছিলেন কিংবা থাকতে পারেননি।

এ কারণে ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে মাগুরা ও কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলা কমিটি বাতিল করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: সংসদ নির্বাচনের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

প্রায় নয় বছর পর কমিটি হয়েছে বরগুনায়। বিলুপ্ত করা হয়েছে খুলনার আহ্বায়ক কমিটি। কাজ চলছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন কমিটি নিয়ে। 

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘গত পনের বছরে আমরা কোনো এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারিনি। এখন প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ইউনিটিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেই দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবে।

দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল সারাদেশে যৌথভাবে প্রতিটি জেলায় যৌথ কর্মী সভা করছে, যার মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারেক রহমানের নির্দেশনা প্রতিটি জেলায় পৌঁছে দেয়া।

তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জেলা পর্যায় সফর করে এসব সমাবেশগুলো সমন্বয় করছেন। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে তরুণ নেতাকর্মীরা তাদের করণীয় সম্পর্কে বার্তা পাচ্ছেন বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

নির্বাচনী প্রস্তুতি যেভাবে চলছে

মূলত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও এমপিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রার্থীরা এবং নতুন করে আগ্রহী প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। 

দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রেজাউর রহমান বলছেন, তার এলাকার বিএনপির সাবেক এমপি নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, গত দশ বছর আমাদের দলের সাবেক এমপি এলাকায় আসতে পারেননি। ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার অপরাধে আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হতে হয়েছিলো। এবার ৮ আগস্ট তিনি এলাকায় এসেছেন। বন্যা ও পূজার সময় নিজে এলাকায় থেকে কাজ করেছেন। তিনি থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুরো এলাকায় জনসংযোগ ও দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।

আরো পড়ুন: পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার রুলে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরো বলেছেন, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি বা মন্ত্রীরা কেউই গত দশ বছরে তাদের নিজ এলাকায় গিয়ে দলীয় বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি। হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েছে। এখনো অনেকে জেলে। প্রতিটি এলাকায় নেতাদের মামলার জট থেকে বের করে আনার কাজ চলছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যা ও পূজার সময় দলের সাবেক এমপি বা সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি।

আমাদের নেতারা যার যার এলাকায় ব্যাপক রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিগুলোতে জনগণের পাশে থাকছেন। প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ইউনিট এতে সক্রিয় হয়েছে।

কারা প্রাধান্য পাচ্ছেন

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে দলের সাবেক এমপি বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থী ছিলেন তারা এবং বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতারা আগামী নির্বাচনে বেশি গুরুত্ব পাবেন। সে কারণে নির্বাচনী এলাকাগুলো চষে বেড়াতে শুরু করেছেন তারা।

কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপিরা এখন নিজ নিজ এলাকায় কাজ করলেও গত দশ বছরে যারা সক্রিয় ছিলেন না তারা এই নির্বাচনে কতটা বিবেচনায় আসবেন তা নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা আছে।

যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ভবিষ্যতের জন্য দলীয় হাইকমান্ড প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদের, যারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাজপথে সক্রিয় ছিল। তবে যারা যৌক্তিক কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারা বিবেচনায় আসবেন কি না সেটা দল আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে।

তিনি আরো বলেন, এখন নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের সমস্যা দেখতে এবং জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে। দল দেখছে কারা দুঃসময়ে কাজ করেছে। অবশ্যই নির্বাচনের জন্য আত্মত্যাগ, পনের বছরের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা এসব বিষয় বিবেচনায় আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App