শেখ হাসিনার সেই দাবি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকা না থাকা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ করে থাকেন, তাহলে তাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি কে দিল?
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। তখন সেনা নিবাসে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, যখন তাকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে গেছেন। এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে, কারণ একটি পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনা প্রশাসন বা বিমান বাহিনী তাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দিতে পারে না। খবর দ্য ওয়ালের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এদিকে ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনার কূটনৈতিক ভিসার মেয়াদ ৪৫ দিন শুক্রবার শেষ হয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি ভারতে অবস্থান করবেন বলে আগেই জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক মহলে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
তবে ঢাকায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোন কথোপকথনে হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি পদত্যাগ করিনি। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পরামর্শে দেশ ছেড়েছি। আমি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ এই মন্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি যদি পদত্যাগ না করে থাকেন, তাহলে দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে?
প্রশ্ন আরো জটিল হয়েছে বিমান বাহিনীর ফ্লাইট রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার পর। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি কার্গো বিমান ৫ আগস্ট দুপুর ৩টা ১১ মিনিটে ঢাকার সেনা বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই সময় ঢাকার গণভবনে ছাত্র জনতার দখল চলছিল এবং শেখ হাসিনা ঢাকাতেই ছিলেন।
সেনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভারতে পাঠানো হয়। তবে হাসিনার দেশত্যাগের অনুমতি কার নির্দেশে দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, তিনি এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
সেনা প্রশাসনের ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটির ট্রান্সপন্ডার ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা সাধারণত তখন নেয়া হয়, যখন উড্ডয়মান কোন বিমান নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে। এমনকি তার বিমানটির উড়ার পথও পরিবর্তন করা হয়েছিল। ঢাকার আকাশসীমা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার উপর দিয়ে দ্রুত ভারতের সীমানায় প্রবেশ করার জন্য এটি করা হয়।
তবে বড় প্রশ্ন থেকেই যায়—শেখ হাসিনা যদি সত্যিই পদত্যাগ করে থাকেন, তাহলে তার দেশত্যাগের অনুমতি কে দিল? সেনা প্রধান যদি এ বিষয়ে অবগত না হয়ে থাকেন, তাহলে কার অধীনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? বিভিন্ন মহল থেকে এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: ভারতে কেনাকাটা করতে গিয়ে বিপাকে শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া তার পদত্যাগপত্রটি সম্পূর্ণ ভুয়া। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।