×

রাজনীতি

রাজনৈতিক নীলনকশা প্রকাশ্যে

Icon

ঝর্ণা মনি

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক নীলনকশা প্রকাশ্যে

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় গতকাল দিনভর কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছবি: ভোরের কাগজ

   
  • নাটাই বিএনপি-জামায়াতের হাতে
  • ঘোষণা দিয়ে মাঠে শিবির-ছাত্রদল
  • কলকাঠি নাড়ছেন তারেক রহমান

আন্দোলন। বাংলা ব্লকেড। দফায় দফায় সংঘর্ষ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর রণক্ষেত্র। ঝরল রক্ত। বলি হলো প্রাণ। কেন এই আত্মাহুতি? কাদের প্ররোচনায় রাজপথে রক্ত দিতেও পিছপা হচ্ছে না আন্দোলনকারীরা? এমন প্রশ্ন সর্বত্র। বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক স্বার্থ। কোটা আন্দোলনের ছদ্মাবরণে মাঠে নেমেছে সরকারবিরোধী শক্তি।

আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত। জামায়াতের ছকে ছাত্রশিবির এই আন্দোলনের হোতা, সঙ্গে রয়েছে ছাত্রদল। ছাত্রদল ও শিবিরকে পেছন থেকে সাংগঠনিক শক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তাদের উদ্দেশ্য, কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। আন্দোলনের নাটাই হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশকে ব্যবহার করছে তারা।

সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন নতুন কিছু নয়। এই আন্দোলনের প্রথম শুরু করেছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির। ১৯৯৬ সাল থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আন্দোলন করছে। ২০০৩-০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের উত্তর-পশ্চিম পাশের লেকচার থিয়েটার ভবন এলাকা থেকে শিবিরের কিছু কর্মী প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের স্লোগান নিয়ে মিছিল বের করত।

মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন অতিক্রমের চেষ্টা করলে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যেত শিবিরকর্মীরা। কিছুদিন পরপরই তখন এই ঘটনা ঘটত। ২০১৮ সালেও কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেটওয়ার্ক ছিল ছাত্র শিবিরের হাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং ওই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিত ছাত্র সংগঠকদের বাছাই করে নেতৃত্বে আনে ছাত্র শিবির। আর আন্দোলনের নাটাই রয়ে যায় তাদের হাতে।

চলমান আন্দোলনে সারাদেশে ৬৫ সদস্যের সমন্বয় কমিটি করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে ১ নম্বর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। নুরুল হক নুরুর দলের নেতা। ২ নম্বর সমন্বয়ক সারজিদ আলম ছিলেন ডাকসু সদস্য। এছাড়া কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন ছাত্রদল, ছাত্র শিবির ও উগ্র বাম সংগঠনের একাধিক নেতাও। মূলত. ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের নিয়েই এই সমন্বয় কমিটি করে তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি-ধরন সবই শিবিরের আন্দোলনের মতো। শিবির জুমে, টেলিগ্রামে মিটিং করে সংগঠিত হয়। কোটাবিরোধীরাও একই পন্থায় আন্দোলন করছে। আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা ফেসবুক, টেলিগ্রাম কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক হল ও বিভাগভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে ছাত্ররা সংগঠিত হয়েছে। এতদিন শিবির, ছাত্রদল ও অন্য সংগঠনের নেতারা আন্দোলনের নেপথ্যে কাজ করছে। আর গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা প্রকাশ্যে রাজপথে নেমেছে। কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভিভাবকসহ সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বলেছেন, দেশের মানুষ জেগে ওঠায় সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না। রুখে দাঁড়াতে হবে, শিক্ষার্থীরা আহ্বান জানিয়েছে। ওই আহ্বানে সারাদেশের মানুষের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়া দিয়ে রাজপথে নামা উচিত। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

এদিকে গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। মঙ্গলবার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেন সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রতিবাদ মিছিল বের করে।

মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় ঘুরে নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়। ছাত্র শিবিরও বিক্ষোভ করেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিবিরের ঢাকা মহানগর কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াত এমন পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চায়। সেজন্যই এই দুই দলের ছাত্র সংগঠনগুলো মাঠে নেমেছ। তারা চাইছে, এই সুযোগে সরকারের পতন আন্দোলন জোরদার করা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়েছেন লন্ডনের দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান- এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটি অরাজনৈতিক ইস্যুকে সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন অপশক্তিকে লেলিয়ে দিয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি তাদের কিছু সমমনা দলও এতে যোগ দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার থেকে মুক্তচিন্তায় অগ্রদূতের ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্লোগানে স্লোগানে নিজেকে রাজাকার ঘোষণা- বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এমনটা কখনোই দেখেনি বাঙালি জাতি। শিক্ষার্থীদের এমন স্লোগানে হতবাক মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন- এদের চালিকাশক্তি কে? তাহলে জামায়াত-শিবিরের ছকে সাজানো ফাঁদে পা রেখে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ? নাকি চলমান আন্দোলনের শুরুতেই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি?

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, কোটা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করেছে। এটি হচ্ছে তার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যারা রাজাকারের পক্ষে স্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন সেখানে বিএনপি-জামায়াত তাদের ‘প্ল্যান্টেড’ লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেয়ার অপচেষ্টা করছে। এই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান এসেছে। এই স্লোগানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

টাইমলাইন: কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App