প্রকাশনাশিল্প ও মুদ্রণশৈলীর দলিল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৩৮ পিএম

বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে কামরুল হাসান শায়ক প্রতিষ্ঠিত একটি নাম। ১৯৬৫ সালে চাঁদপুর জেলার রঘুনাথপুর গ্রামে তার জন্ম।শিক্ষা ক্ষেত্রে যে জাতি যত বড় শিক্ষিত, সে জাতিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্মানী ও সুখী। অর্থাৎ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ, সভ্যজাতি ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সুশিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক গড়ার কারিগর প্রকৃতি, মা-বাবা, শিক্ষক ও শিক্ষকের হাতে থাকা বই। আর বই মানেই মুদ্রণশৈলী বা প্রকাশনা। আজ আমরা কথা বলব, কামরুল হাসান শায়ক বিরচিত ‘মুদ্রণশৈলী নান্দনিক প্রকাশনার নির্দেশিকা’ গ্রন্থ নিয়ে। পরিশিষ্টসহ পাঁচটি অধ্যায়ে গ্রন্থটি শেষ করা হয়েছে। অধ্যায়গুলো হলো- ১. প্রকাশনাশিল্পে মুদ্রণশৈলীর গুরুত্ব, ২. টেক্সট প্যানেল, ৩. বইয়ের অংশসমূহ এবং ৪. বাঁধাই, কভার ও জ্যাকেট। এর একটার ভেতরে আছে আরেকটা, শাখা থেকে উপশাখা, নদ-নদীসহ হাজারো টীকা-টিপ্পনী। টীকাকারের টীকা। যার বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে লিখতে হবে আরেকটা মুদ্রণশৈলী। কিন্তু সে কি সম্ভব? সবাই কি কামরুল হাসান শায়কের মতো বিদ্বজ্জন বা পণ্ডিত? না, ‘মুদ্রণশৈলী নান্দনিক প্রকাশনার নির্দেশিকা’ শুধু শায়ককেই মানায়। মুদ্রণশৈলীর ভেতরে রয়েছে মুদ্রণশৈলীর আরো কারুকাজ। মুদ্রণশৈলীকে এ গ্রন্থে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন : সুপাঠ্য, বিন্যাস, নির্দেশনা, ও সামঞ্জস্য। রয়েছে সহজপাঠ্য ও সুপাঠ্যের ব্যবধান। আমরা অনেকেই সহজপাঠ্য ও সুপাঠ্য শব্দ দুটিকে পরস্পরের সমার্থক মনে করি। কিন্তু মুদ্রণবিদ্যায় দুটির অর্থ এক নয়। সহজপাঠ্য শব্দটি দ্বারা সহজেই প্রতিটি অক্ষরকে আলাদাভাবে চিনতে ও আলাদাভাবে মর্মোদ্ধার করতে পারাকে বোঝায়। ঠিক সুপাঠ্য বলতে একটি টেক্সট পড়ে সহজেই বুঝতে পারা ও গলাধঃকরণকেই বোঝায়। অধ্যায় দুইয়ে আছে টেক্সট প্যানেল। এই প্যানেলের শিরোনামগুলো হলো- ফরম্যাট, টেক্সট প্যানেল বিন্যাস, টেক্সট প্যানেলের অনুপাত, স্থানবিন্যাস ও মার্জিন, গাটার ও সম্মুখপ্রান্ত, হেড ও ফুট প্রচলিত মার্জিন এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ লে-আউট। এভাবে অধ্যায় তিন ও চারের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বইটিকে প্রকাশনা জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ে পরিণত করেছে। আমরা জানি, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে একটি মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগ খোলা হয়েছে। এ বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পেশাজীবী প্রকাশকরা ইতোমধ্যে কামরুল হাসান শায়কের ‘মুদ্রণশৈলী নান্দনিক প্রকাশনার নির্দেশিকা’ বইটি পড়ে বেশ উপকৃত হয়েছেন। বইটির তুমুল প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি তারা কিছু মতামতও প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ের ওপর বাংলায় এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থ পাওয়া যায় না। এটাই প্রথম। এ বিষয়ে লেখক কামরুল হাসান শায়ক বলেন, ‘আমি মনে করি প্রকাশনাবিষয়ক আমার সিরিজের বইগুলো প্রকাশনা জগতে শুধু পেশাজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পাঠ্যগ্রন্থ হিসেবেই কাজ করবে না, বরং বাংলাদেশের প্রকাশনাকে কাক্সিক্ষত ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ প্রকাশনাশিল্প ও মুদ্রণশৈলী সম্পর্কে আছে কামরুল হাসান শায়কের নিজস্ব কিছু মতামত। তিনি বলেন, প্রকাশনাশিল্প বেঁচে থাকবে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের চিন্তচেতনার মধ্যে। এর জন্য সবার ভেতরেই একটা সৃজনশীল পেশাদারিত্ব মনোভাব প্রয়োজন। লেখক কেন, কী লিখবেন- প্রকাশক কী প্রকাশ করবেন, তার সবই পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় মুদ্রণশৈলীর মুদ্রণ বা নন্দনতত্ত্ব। যা সামনেও হবে। আসলে শিশুদের কল্পনা শক্তি অনেক প্রখর। তারা একটা কিছু পড়লেই সেটার সঙ্গে কল্পনাও করে। সে কল্পনাতেই আনন্দ পায়। তাই বইয়ের মাধ্যমে শিশুকে সেই কল্পনার জগতে প্রবেশ করাতে হবে। তাই শিশুদের বইয়ে লেখার চেয়েও রঙের খেলা থাকবে হবে বেশি। মানে কালারফুল ছবি থাকতে হবে। শিশুদের বইয়ে বয়স অনুযায়ী কনটেন্ট ও ড্রয়িং থাকবে। সহজ ও সরল বাক্য থাকবে। আমার মনে হয় শিশুদের বইয়ে রঙের খেলা, ছবির খেলা, ফন্টের খেলায় দারুণ সামঞ্জস্য থাকতে হবে। লেখককে পাণ্ডুলিপি তৈরি করা বা জমা দেয়ার কিছু নিয়মকানুন আছে। আছে প্রকাশকদেরও নিয়মনীতি, যা আমাদের মেনে চলতে হবে। এখানে আমরা অল্পকিছু নিয়ে উদ্ধৃত করছি- প্রিন্ট কপি জমা দেয়ার সঙ্গে ইলেকট্রনিক ফাইলও জমা দিতে হয়। কাজের স্বার্থে প্রকাশকদের পাণ্ডুলিপির ইলেকট্রনিক কপির সর্বশেষ সংস্করণটির প্রয়োজন পড়তে পারে। লেখকদের প্রতি প্রকাশকের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন অবশ্যই তাদের সব ইলেকট্রনিক ফাইলের ব্যাক-আপ রেখে লেখা জমা দেন। বই প্রকাশের কাজে বিশেষ করে প্রকাশকরা ইলেকট্রনিক ফাইলের পাশাপাশি একটি হার্ড কপিও জমা নেন। কোনো কোনো প্রকাশক লেখার ডক ফাইলের সঙ্গে তার পিডিএফ ফরমটিও চেয়ে থাকেন। ইলেকট্রনিক ফাইলটি অন্য কম্পিউটারে নিলে অনেক সময় ফন্ট ভেঙে যায়, এমন সমস্যারোধে পিডিএফ ফাইল বেশ কার্যকর। লেখার যেসব উপাদান ইলেকট্রনিক ফর্মে বা আকারে থাকে না, সেসব বিশদভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে। একইভাবে ভিডিও বা অ্যানিমেশনের মতো কিছু যার প্রিন্ট নেয়া সম্ভব না, সেগুলোর ব্যবহৃত প্রতিটি সফটওয়্যারের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্যও উল্লেখ করতে হয়। লেখকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে জমা দেয়ার পর সেটিতে আর কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন না আনেন। যদি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আনতেই হয়, তা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশককে জানিয়ে দিতে হবে। প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপির কপিটি প্রয়োজনীয় তথ্যসহ জমা দেয়ার পরই আক্ষরিক অর্থে লেখকের কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে কামরুল হাসান শায়ক প্রতিষ্ঠিত একটি নাম। ১৯৬৫ সালে চাঁদপুর জেলার রঘুনাথপুর গ্রামে তার জন্ম। তার বাবা মৃত সিরাজুল হক ভুঁইয়া এবং মাতা সালমা বেগম। শৈশবকাল থেকেই কামরুল হাসান শায়ক ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। লেখালেখি ছিল তার অন্যতম প্রিয় শখ। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতেও ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাধর। জীবনের প্রথমদিকের কর্মপ্রচেষ্টার ফল হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পড়াশুনা শেষ করে প্রকাশনাশিল্পে মনোনিবেশ করে অর্জিত দক্ষতাকে কাজে লাগান এবং সফলতার শিখরে আরোহণ করেন। স্রোতের শেওলার মতো ভেসে তিনি আজকের এই শিখরে আরোহণ করেননি। পরবর্তীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেড’-এর অন্যতম কর্ণধার। লেখক কামরুল হাসান শায়কের ‘মুদ্রণশৈলী নান্দনিক প্রকাশনার নির্দেশিকা’ বইটির দামও আপনার হাতের নাগালে; দাম মাত্র ৬৫০ টাকা। নান্দনিকতায় ভরা, অসম্ভব সুন্দর প্রচ্ছদ করেছেন রাজিব রাজু। ম্যাট লেমিনেশন আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করেছে। আমরা বইটির বহুল প্রচার, প্রসার ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। বইটি আপনার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে। মৃধা আলাউদ্দিন