×

মতামত

তারুণ্যের প্রযুক্তি আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য

Icon

রুবিনা হক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম

তারুণ্যের প্রযুক্তি আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য

রুবিনা হক, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক

   

বাংলাদেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা ১৬৯.৮ মিলিয়ন, এর মধ্যে ২৭.৯৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪৭.৫ মিলিয়ন তরুণ-তরুণী ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সম্পদ, জনশক্তি। তবে প্রযুক্তি আসক্তি, শারীরিক কর্মকাণ্ডে অনাগ্রহ, এবং সাইবার বুলিং তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

গত এক দশকে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্মার্ট ফোন, ভিডিও গেমস, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবা এখন আগের চেয়ে সহজলভ্য। শিশু ও তরুণেরা দিনের বড় একটি সময় ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কাটায়, ফলে তারা দিনকে দিন বাস্তব জীবনে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তাদের আশেপাশের মানুষ  থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একই সাথে কমে যাচ্ছে নিয়মিত এক্সারসাইজের পরিমাণ। 

আরেকটি ভয়ানক সমস্যা হল সাইবার বুলিং। অনলাইনে নিজের ঘরের মধ্যে বসে অন্যকে কটূক্তি, অপমান বা হুমকি দেওয়া খুবই সহজ তবে এতে যা হয়েছে ভিক্টিম তার নিজের ঘরে থেকেও সুরক্ষিত বোধ করে না। এই সমস্যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হল তরুণ সমাজ।  এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন  মানসিক সমস্যা যেমন, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, পিটিএসডি, আত্মহত্যা প্রবণতার সময় সংকট। এ বিষয়ে যে শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে তা নয়, বরং নষ্ট করে দিচ্ছে  আত্মবিশ্বাস এবং বাড়ছে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার প্রবণতা। এছাড়াও, স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া তরুণদের মধ্যে খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস কমে গেছে।

শহরে পর্যাপ্ত মাঠের অভাব আসক্তির অন্যতম কারণ। কোচিং কালচার ও মাঠের অভাবে খেলতে যেতে না পারা তরুণেরা বিকল্প হিসেবে বেঁছে নিয়েছে মোবাইল ফোন ও গেমিং কম্পিউটার। আজকে তা রীতিমতো জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে স্থূলতা, বিষণ্ণতা ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা।

শিক্ষা এবং সামাজিক জীবনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সারাক্ষণ একে অন্যের সাথে তুলনা করার একটা বিষয় খেয়াল করা যায়। অন্যদের সফলতা দেখে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করার প্রবণতা তরুণদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। টেক এডিকশন ও সাইবার বুলিং বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা এবং নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে তরুণদের মধ্যে এই বয়সেই ওবিসিটি, হার্ট ডিজিস, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সারাক্ষণ থাকার করার কারণে বাস্তব জীবনের সাথে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে।

আমাদের দ্রুত উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিশুকাল থেকেই সচেতন করতে হবে। শুধু তরুণদের নয়, পরিবারের বড়দের সচেতন হবার প্রয়োজন রয়েছে সবচেয়ে বেশি। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবখানে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রযুক্তি আসক্তির সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব। স্কুল কলেজে নিয়মিত খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়ামের আয়োজন বাধ্যতামূলক করা উচিত। পরিবার থেকেও শিশুদের বাইরে খেলতে উৎসাহিত করতে হবে।

তরুণদের সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সচেতন করা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পদ্ধতি শেখানো প্রয়োজন। সরকারিভাবে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতি সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তরুণদের উৎসাহিত করতে হবে। তরুণদের দিনে নির্দিষ্ট সময় স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে ও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে বাস্তব জীবনের কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার সুযোগ দিতে হবে।  মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় কাউন্সিলিং ও সাপোর্ট গ্রুপের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশের তরুণদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এটি কোনও এক পাক্ষিক সমস্যা নয়, বা এর সমাধান কোনও এক ব্যক্তির পক্ষে একা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী- সম্মিলিত উদ্যোগ।

লেখক: রুবিনা হক, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক, ইমেইল: rubinahoq7@gmail.com

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App