×

মতামত

কার্বন ফুট-প্রিন্ট: ভবিষ্যৎ ও বাংলাদেশ

Icon

সামিহা সালেহা

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম

কার্বন ফুট-প্রিন্ট: ভবিষ্যৎ ও বাংলাদেশ

সামিহা সালেহা, গবেষণা সহযোগী, রিসার্চ এসোসিয়েট, লোকালি লেড এডাপটেশন প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট

   

দৈনন্দিন জীবনে অনেক ধরনের কার্যক্রমের সাথে আমরা জড়িত থাকি যা প্রায় সময় পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সচেতন বা অবচেতন মনে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছি যা আমাদেরই অস্তিত্বকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কার্বন ফুট-প্রিন্ট’। 

জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলন (ইউএনএফসিসিসি নামে সমধিক পরিচিত) এর তথ্যানুসারে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের কার্যকলাপের জন্য বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যা জলবায়ু পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলে। কার্বন ফুট-প্রিন্টকে গ্রিন হাউজ গ্যাসের মাপকাঠি হিসেবেও ব্যবহার করা হয় যেখানে মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্রিন হাউজ গ্যাসকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য ধরে প্রকাশ করা হয়। 

উক্ত সূচক ব্যক্তিগত, উৎপাদন, শিল্প ও সংস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমাপ করা যায়। উৎপাদন ও শিল্প স্তরে কার্বন ফুট-প্রিন্ট কমানো কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব কোন কাজ নয়। তবে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। কিন্তু এই সূচক কেন কমাতে হবে? 

ইউএনএফসিসিসি ও রেনসল ফাউন্ডেশনের হিসেবে, কার্বন নিঃসরণ কেবল বায়ুমণ্ডল নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদানের উপর সরাসরি আঘাত হানে। পরিবেশে আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন ধরণের ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানি ও ভূমিতে লবণাক্তটা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য প্রভাবগুলো হলও ক্রমবর্ধমান গ্রিন হাউজ গ্যাস বা কার্বন সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্যাস বৃদ্ধির  ফলাফল। 

বাংলাদেশের কৃষিজাত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ও অসময়ের বৃষ্টিপাত পর্যায়ক্রমে খরা ও বন্যা বয়ে আনে যে কারণে দেশীয় ফসল উৎপাদনে কৃষকদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একদিকে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর স্থানীয়রা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকায় দিনানিপাত করে,  অন্যদিকে চরাঞ্চলের মানুষ ভূমিহারা হওয়ার ভয়ে থাকে। 

এছাড়া এই সঙ্কটের কারণে অনেক বন্যপ্রাণীকুল বিলুপ্তির পথে আছে। নেচার কনজারভেন্সি নামক একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থার গবেষণা থেকে জানা যায়, বর্তমান হারে জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর প্রজাতির অন্তত এক চতুর্থাংশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা আছে। বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মানুষ যদি নিজের স্বাস্থ্যের কথাও চিন্তা করে, জলবায়ুর এই পরিবর্তন মানবস্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে। খরা ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের শিশুরা অপুষ্টি ও পানি-বাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। 

পাশাপাশি লবণাক্ত অঞ্চলে নারীসমাজের  মাসিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়; এতে অনেক নারী জরায়ুর বিভিন্ন রোগ কিংবা বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগছে। পরিবেশের এই পরিবর্তন অর্থনীতির ক্ষেত্রেও গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব দেশ মূলত কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য ভূমির উপর নির্ভরশীল, সেসব দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব অত্যন্ত বেশি; উদাহরণস্বরূপ ধরা যেতে পারে ‘বাংলাদেশ’ কে। কেবল স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ নয়, আমেরিকার মত অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতিও পরিবেশের এই পরিবর্তনের জন্য হুমকির মুখে আছে। 

বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আমাদের সকলের উচিত, নিজ নিজ জীবনযাত্রায় কার্বন নিঃসরণ যথাসম্ভব কমানো। এক্ষেত্রে আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য-পণ্য ক্রয় ও গ্রহণ করতে পারি। যেসব অঞ্চলে কাছাকাছি কাঁচা শাকসবজি উৎপাদন করা হয় কিংবা মাছ-মাংসের খামার আছে, সেসব বাজার বা চাষিদের থেকে সরাসরি খাদ্য-পণ্য ক্রয় ও গ্রহণ করলে যাতায়াত বা সংরক্ষণে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হতো, তা অনেকাংশে কমে যায়। 

এছাড়াও, উচ্চ শক্তির দক্ষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। নতুন প্রজন্মের যন্ত্রপাতি ক্রমশ আরও টেকসই ও দক্ষ হয়ে উঠছে যেন তা লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। তাই, যেকোনো যন্ত্রপাতি কেনার আগে এর লেবেল পরীক্ষা করুন; যন্ত্রটি গুণমান মাত্রা মেনে এবং টেকসই নীতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

কার্বন ফুট-প্রিন্ট কমাতে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করা উচিত। বাড়িতে বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চয়ের জন্য, অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সামগ্রী খুলে রাখা যেতে পারে। এছাড়া ঘর-বাড়ি বা অফিসে এসির তাপমাত্রা ১৮º সেলসিয়াস থেকে ২৩º সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখলে এসি ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ খরচ কমানো সম্ভব। একইভাবে, দিনের বেলায় সূর্যের প্রাকৃতিক উৎস সর্বাধিক ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে। কোন কিছু ধোঁয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় পানির কল বন্ধ রাখলে শত শত লিটার পানি বাঁচানো সম্ভব হয়। 

গণপরিবহণ বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব সমাধান যেমন সাইকেল, ইলেকট্রিক স্কুটার বা ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার কার্বন ফুট-প্রিন্ট কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য নিজের ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার না করে, বিদ্যমান পরিবহণ ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার করলে শহরগুলোতে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, কার্বন নিঃসরণ কমে এবং নাগরিকদের জীবনমানের সূচক বাড়ায়। কিন্তু গণপরিবহন ব্যবস্থা যাত্রীদের জন্য সহজ ও নিরাপদ করতে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি আবশ্যক।  

লেখক: সামিহা সালেহা, গবেষণা সহযোগী, রিসার্চ এসোসিয়েট, লোকালি লেড এডাপটেশন প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট; ইমেইল: salehasamiha@gmail.com/ samiha.saleha@icccad.org

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App